নারীর গড় আয়ু বেড়েছে

মহাজোট সরকার শুরু থেকেই নারী উন্নয়নের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এখানে মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবার মান যথেষ্ট বেড়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে নারীর গড় আয়ু আগের তুলনায় বেড়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক জানান, গত নয় বছরে দেশে নারীর গড় আয়ু তিন বছর বেড়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে এখানে নারীর গড় আয়ু ছিল ৬৫ দশমিক ৮ বছর। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৮ দশমিক ৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এ দেশের নারীরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এখনও নারী উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। এরা নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী। এদেশে এখনও এমন কিছু মৌলবাদী গ্রুপ রয়েছে যারা নারীর সমানাধিকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। বস্তুত বাংলাদেশের সমাজ জীবনে এ ধরনের শক্তি নতুন কিছু নয়। বহু আগে থেকে এখানকার নারীকে অনেকটা গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয়েছে। লেখাপড়ার সুযোগ তাদের প্রায় ছিলই না। পুরুষের পাশাপাশি সামাজিক কর্মতৎপরতায় অংশগ্রহণের অধিকার থেকে তারা দীর্ঘকাল বঞ্চিত ছিল। প্রায় শতবর্ষ আগে বেগম রোকেয়া অবরোধবাসিনী বাঙালী মুসলিম নারীর জন্য শিক্ষার দরোজা উন্মোচন করেন। অবশ্য তার পরেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা নানাভাবে বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। এখনও অনেক পরিবারে মেয়েশিশুর তুলনায় ছেলেকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়; এমনকি পুষ্টিকর খাদ্য দেয়ার সময়ও মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়। ফলে অনেক মেয়েই পুষ্টিহীনতার শিকার হয়।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকারের কথা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজ তখন শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ স্থগিত হয়ে যায়। দীর্ঘকাল পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ ছেলেদের তুলনায় বেশি। দেশব্যাপী ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় কম। সরকার গ্রামাঞ্চলে নারীশিক্ষা সম্পূর্ণভাবে অবৈতনিক করেছে।
স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নারীদের সচেতনতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে স্বাবলম্বী নারীর সংখ্যা বেড়েছে। আসলে নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা যত ভাল হবে ততই তাদের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হবে। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রেরণা জোগাবে। সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী কর্তৃক সন্তান প্রসব নিশ্চিত হয়েছে। একইসঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকায় নারী নির্যাতন বন্ধের উদ্যোগ নেয়া জরুরী।

No comments

Powered by Blogger.