দারিদ্র্য হ্রাস-এ অর্জন ধরে রাখতে হবে

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও তাদের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারছিল না। মন্দাজনিত কারণে গ্রিসসহ অনেক দেশেই চলছে ব্যাপক অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ।
ভাবতেও আনন্দ হয়। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ বা প্রায় ২৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষ। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজি অনুযায়ী ২০১৫ সালে দারিদ্র্য কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাংলাদেশ ২০১৩ সালেই সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। এ জন্য জাতিসংঘ বাংলাদেশকে পুরস্কৃতও করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা আশা করতে পারি, ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের 'বাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট' শিরোনামের রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানেও একই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
স্বাধীনতার চার দশক পর বাংলাদেশ যে আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সে সত্য আজ নানা দিক থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে। ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের প্রত্যাশাও ছিল এমনটাই। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সমৃদ্ধ দেশ। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, অনেক উত্থান-পতনের কারণে বাংলাদেশ তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে সরলগতিতে এগোতে পারেনি। কিন্তু দেরিতে হলেও বাংলাদেশ যে আবার তার কাঙ্ক্ষিত পথে এগিয়ে চলেছে, তারই একটি বড় প্রমাণ উল্লেখযোগ্য হারে চরম দারিদ্র্য হ্রাস। দারিদ্র্য হ্রাসে যেসব উপাদান মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কৃষির আধুনিকায়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্পের বিকাশ, অবকাঠামোর উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের ক্রমবর্ধমান হারে অংশগ্রহণ, শিক্ষা, বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার প্রসার তথা নারী-পুরুষের কর্মক্ষমতার উন্নয়ন ও বিদেশে দক্ষ শ্রমিক রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি। এ ধারা অব্যাহত রাখা গেলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যে আরো এগিয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চরম দারিদ্র্য একেবারে নির্মূল করাও অসম্ভব হবে না। এ জন্য এখনো যেসব বাধা উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সেগুলো আরো কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা হচ্ছে দুর্নীতি, বিশেষ করে প্রশাসনিক দুর্নীতি। এর পরিবর্তন প্রয়োজন। এ জন্য দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থাগুলোকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচার বিভাগকে প্রকৃত অর্থেই স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে। সরকারের সব স্তরে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। অবকাঠামো ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সুবিধা বাড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকাকেন্দ্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার কাঠামোগুলোকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করতে হবে। সর্বোপরি ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিরও লক্ষ্য হতে হবে দেশের উন্নয়ন। আর তাহলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।

No comments

Powered by Blogger.