ঘর-মন-জানালা অপরিচিতা

আচমকা চোখে পড়ল মেয়েটিকে। স্ট্রেচারের ওপর বসা। হাসপাতালের একজন স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। একেবারে আমার সামনে স্ট্রেচারটা রেখে চলে গেল। মেয়েটি একা বসে। কত হবে বয়স? মনে হয় সম্মান প্রথম বর্ষের অথবা দ্বিতীয় বর্ষের হবে।
উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং, ঘন কালো রেশমি চুল দুই পাশে ছড়ানো। নাকের গড়ন ঠিক ততখানি সুন্দর, যতখানি হওয়া উচিত। কাজল কালো চোখ। রুগ্ণতার কারণে মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে। কিন্তু সৌন্দর্য তাতে হানি হয়নি।
সেদিন শ্রাবণের দিন নয়, তবু সেদিন সারা বেলা মেঘলা আকাশ। জ্যৈষ্ঠ মাসের ঝড়ের পূর্বাভাস। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আগমনী বার্তা। ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের পাঁচতলার জানালা দিয়ে প্রকৃতির উন্মাদনা চোখে পড়ছে। মেয়েটিকে দেখে আমার ভেতরেও এক বিপুল ঝড়ের মাতামাতি শুরু হয়েছে। কয়েকবার চোখাচোখি হলো। মেয়েটি পানি খাচ্ছে। আমি পাশেই বসা। আমার রোগী ভেতরে আলট্রাসনোগ্রাম করাচ্ছে। নাম জানতে ইচ্ছা করছে খুব। এ রকম একজন মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছা করে। ভাবতে ভাবতে কোনো এক ফাঁকে তার মা চলে এল, সঙ্গে অন্য একজন নারী।
তারপর! মেয়েটি হারিয়ে গেল। কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছিলাম। হয়নি! মেয়েটি আলট্রাসনোগ্রাম করতে ভেতরে ঢুকে গেল। আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটির সঙ্গে কত কথা বলার ছিল। ওই দিনের পর থেকে প্রতিদিন মেয়েটির কথা ভাবি; আর মনে হয়, কী ভুলই না করেছি! পরিচিত হলে কী ভালোই না হতো।
রাহাত

No comments

Powered by Blogger.