মাদক চোরাচালানের ট্রানজিট রুট বাংলাদেশ- ব্যবহার করা হচ্ছে বিমানবন্দর পোস্ট অফিস ও কুরিয়ার সার্ভিস ॥ এক বিদেশী ও দুই নারীসহ গ্রেফতার ৪

বিমানবন্দর, পোস্ট অফিস ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য চোরাচালান হচ্ছে। দুর্বল নিরাপত্তা ও চেকিং সিস্টেমের কারণে এসব চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্র ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
হেরোইন, আফিম, মরফিনসহ অন্যান্য দামী মাদকগুলো আসছে বিমানবন্দর হয়ে। এ কাজে বিদেশী মাদক পাচারকারীদের সহায়তা করছে এদেশীয় মাদক পাচারকারীরা। এক বিদেশী নাগরিক ও দুই বাংলাদেশী নারীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় দেড় কেজি হেরোইন ও জাল ডলারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। গ্রেফতারকৃতরা এমন তথ্য দিয়েছে। বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানচক্রগুলো ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ আছে। চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে তৎপরতাও অব্যাহত আছে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারীরা গ্রেফতারও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর একটি দল গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্য নাইজেরিয়ান নাগরিক অনিকা গডসন বামালো (৩৪), আবুল কাশেম (৫২), পিতা-মৃত আব্দুল খালেক মাস্টার, সাং-আলিপুরা, থানা-গজারিয়া, জেলা-মুন্সীগঞ্জ, বর্তমান ঠিকানা সাং- মাদবরের বোনের বাসা, রোড নং ১৩, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা, পায়েল বেগম (২৮), পিতা-মৃত উজির আহমেদ, সাং-চন্দ্রনারায়ণপুর, থানা-সাভার, জেলা-ঢাকা, বর্তমান সাং-১৪৩/৭(খ) মেরাদিয়া মধ্যপাড়া, থানা-খিলগাঁও, জেলা-ডিএমপি ঢাকা ও নীলিমা লাবণ্য (২৮), স্বামী-ওমর ফারুক, সাং-আগলা, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলা-ঢাকাকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার তাদের র‌্যাব-১ এর উত্তরা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গ্র্রেফতারকৃত ২ বাংলাদেশী মহিলা দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে পায়েলের স্বামী একজন নাইজেরিয়ান। তিনি অনেক আগেই বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। আসামি আবুল কাশেম চালক। সে দীর্ঘ সময় ধরে এই চক্রের মাদক পরিবহনের কাজে সহায়তা করে আসছে।
গ্রেফতারকৃতরা ডিএইচএল রামপুরা শাখায় হেরোইনের একটি চালান কাপড়ের বাক্সের মাধ্যমে চীনে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। পরে জব্দ করা বাক্সটি থেকে ৪৩টি আন্ডারওয়্যারের প্যাকেট পাওয়া যায়। প্রতিটি আন্ডারওয়ারের প্যাকেটের মধ্যেই হেরোইন পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরেই নাইজেরিয়ান অনিকা গডসন বামালোকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ৫৭টি অনুরূপ হেরোইনসংবলিত আন্ডারওয়ারের প্যাকেট ও হেরোইন প্রস্তুত করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়। তার কাছ থেকে ৩১শ’ জাল ডলার উদ্ধার হয়। বামালো জানায়, তার সঙ্গে বেশ কয়েক নাইজেরিয়ান নাগরিক জড়িত।
র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহ্সান জানান, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারীদের সঙ্গে কাজ করছিল। তারা ইতোপূর্বেও বেশ কয়েকটি চালান পার করেছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পোস্ট অফিস ও কুরিয়ার সার্র্ভিসের মাধ্যমে এসব মাদক বিদেশ থেকে আনা ও পাচারের কাজ চলে। মূলত দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও চেকিং ত্রুটির কারণে এসব ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.