সৌদিতে বৈধকরণ প্রক্রিয়া-ইকামা বদলাতে গিয়ে জুটছে কম বেতনের চাকরি by মেহেদী হাসান

জামালপুরের মো. মিন্টু সৌদি আরবের জেদ্দার কাছে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে মাসে পাঁচ হাজার রিয়াল (প্রায় এক লাখ ১০ হাজার টাকা) বেতনে চাকরি করতেন। এর মধ্যে তাঁর ইকামার (নিয়োগপত্র) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
বৈধ হতে তাঁকেও বদলাতে হচ্ছে ইকামা। কিন্তু নতুন চাকরি খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো মাথায় হাত। আগের বেতন তো নয়ই, কাছাকাছি বেতনের চাকরির প্রস্তাবও তাঁকে দিচ্ছে না কেউ। এদিকে সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। নতুন চাকরি জোগাড় করে ইকামা পরিবর্তন প্রক্রিয়াটিও সময়সাপেক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে তিনি মাত্র এক হাজার রিয়াল বেতনে (প্রায় ২২ হাজার টাকা) একটি প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি
ঠিক করেছেন।
মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, বিপুলসংখ্যক বিদেশি কর্মীকে ইকামা পরিবর্তন করতে হবে। চাকরির সংখ্যার তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এ সুযোগে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠানগুলো কম বেতনে চাকরির প্রস্তাব করছে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে বিদেশি কর্মীরা ওই চাকরিগুলোতে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ বৈধ না হলে সৌদি আরবে অবস্থান করা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
মিন্টু আরো জানান, তাঁর মতো অনেক বাংলাদেশি এ সমস্যায় পড়েছেন। অনেকে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে আছেন। ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ভালো উপার্জন করেছেন। তাঁদের ওই আয়ের ওপর সৌদি আরবে নিজেদের এবং দেশে পরিবারের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। কিন্তু এখন বৈধ হতে গিয়ে রাতারাতি আয় অনেক কমে গেলে কিভাবে এর সঙ্গে খাপ খাওয়াবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটিতে প্রায় ১২ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। চলতি অর্থবছরের (২০১২-১৩) মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এক হাজার ৩৩৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরব থেকেই এসেছে ৩৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলারেরও বেশি। অর্থবছর শেষে সৌদি আরব থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাস বিভিন্ন প্রয়াস চালিয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সোনালী ব্যাংক প্রতিনিধি অফিস রেমিট্যান্স প্রেরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণও বাড়ছে। কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের আয় কমে গেলে রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর এর প্রভাব পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.