গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না : ফখরুল

সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলা শুরু করছেন, তা বন্ধ করুন। সরকারের তদন্ত কমিশনের সুপারিশকে 'নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করা'র নীতি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে ফখরুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারি ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জনকারী এ প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর এই সরকার প্রতিহিংসার খৰ সর্বদা ঝুলিয়ে রেখেছে। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের সফলতা এবং এর দক্ষতার মূল কারিগর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপমান করাই ছিল যেন এই সরকারের প্রধান এজেন্ডা। সেই ধারাবাহিকতায় অন্যায়ভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করার পরও সরকারের জিঘাংসা মিটছে না। এখন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার চূড়ান্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশন গ্রামীণ ব্যাংকের আইন কাঠামো পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। গ্রামীণ ব্যাংককে চিরতরে নিঃশেষ করার চক্রান্তের এই সর্বনাশা সুপারিশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ফখরুল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ভিন্নমাত্রার, ভিন্ন আঙ্গিকের একটি অর্থলগি্নকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একটি যুগান্তকারী মডেল হিসেবে সমাদৃত। বর্তমানে এই ব্যাংক ৮৪ লাখ সদস্যের মধ্যে এর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ ব্যাংক এক অসাধারণ কর্মকুশলতা ও দক্ষতার দ্বারা আজ এ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কিত তদন্ত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গরিব মানুষের মালিকানা গায়ের জোরে কেড়ে নেওয়া হবে। দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি রুদ্ধ করে তাদের হতদরিদ্র অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হবে। যে অনন্য আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা লাভ করেছে, সেই কাঠামো পরিবর্তন করে গ্রামীণ ব্যাংককে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদলে ১৯টি বা ততোধিক ক্ষুদ্র গ্রামীণ ব্যাংকে পরিণত করা অথবা প্রায় প্রাইভেট ব্যাংকে পরিণত করার যে সুপারিশ তদন্ত কমিশন করেছে, তাতে সরকার নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করার নীতিই অনুসরণ করছে। এতে নিজ দেশ, দেশের বরেণ্য ব্যক্তি এবং বিশ্বব্যাপী সর্বজন প্রশংসিত দেশীয় প্রতিষ্ঠানকেই অমর্যাদা করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়।
মির্জা ফখরুল সরকারকে অবিলম্বে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করে সমগ্র বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মানুষের প্রত্যাশা ও প্রেরণার প্রতিষ্ঠান; যা দেশকে গৌরবান্বিত করেছে; সেই গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার সব অশুভ পরিকল্পনা থেকে সরে আসার জোরালো আহ্বান জানান।
গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশন ব্যাংকটির ৫১ শতাংশের বেশি সরকারের মালিকানায় রাখার যে সুপারিশ করেছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, খ্যাতি অর্জনকারী এ প্রতিষ্ঠানটির ৯৭ শতাংশ মালিক নারী। সেই ব্যাংকের আইনি কাঠামো পরিবর্তন করে সরকার নিজের হাতে পরিচালনা করার যে নীলনকশা এঁকেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ ব্যাংকের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়বে। দরিদ্র নারী-পুরুষের নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ বন্ধ করে শুধু ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংসের ধারাবাহিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।

No comments

Powered by Blogger.