বিরোধী নেত্রী সিঙ্গাপুরে যান ষড়যন্ত্র করতে ॥ প্রধানমন্ত্রী- ‘এবার ফিরে দেশের বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র করে সে বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকুন’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে যান দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। সিঙ্গাপুর থেকে এসে গত মে মাসে তিনি গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন।
হেফাজত কর্মীদের বসিয়ে দিলেন। বলে ফেললেন সরকার পতন ঘটাবেন। এবার আবার সিঙ্গাপুর থেকে এসে দেশের বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র করে সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। লুটেরা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সৃষ্টিকারীরা যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরে বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর তত্ত্বাবধায়কের কথা বলেন না। এবার তত্ত্বাবধায়ক এলে আমাকে-আপনাকে (দুই নেত্রী) আবারও জেলে যেতে হবে। তারা নির্বাচন দেবে না। ক্ষমতায় থাকতে চাইবে রোজ কিয়ামত পর্যন্ত। বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে যখন আপনারা বিজয়ী হয়েছেন তখন আর তত্ত্বাবধায়ক চান কেন। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই বিজয়ী হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাসহ দেশের সকল অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণ বুঝতে পারে, সরকার মানে জনগণের সেবক। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত সময়টা স্বর্ণযুগ হিসেবে লেখা থাকবে। তিনি বলেন, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। সে সময় অনেকে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত ছিল। কিন্তু পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আটক যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেন। রাজনীতিতে তাদের পুনর্বাসন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ধ্বংস করেন। খালেদা জিয়াও তাঁর স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। ভোট চুরি করে খুনী রশীদকে সংসদ সদস্য বানান। ২০০১ সালের পর পরবর্তী পাঁচ বছর একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতোই পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে অত্যাচার-নির্যাতন চালায় বিএনপি-জামায়াত। একই সঙ্গে জনগণের অর্থ-সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে। দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। তাদের পাঁচ বছরের দুঃশাসনের পর আসে আর্মি ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নির্বাচন না দিয়ে তারা আবার আর্মি হেডেড হওয়ার চেষ্টা করে। আর সে সময় ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন’ একজন বললেন, এ সরকার রোজ কিয়ামত পর্যন্ত থাকতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসে লুটপাট করতে। এ কারণে ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে আজ তারা ১৫টি ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক। গরিবের পেটে লাথি মেরে নিজেরা কোটিপতি বনে গেছেন। গত ৫ মে হেফাজতের কর্মসূচী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই দিন জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীরা ভেতরে প্যান্ট-গেঞ্জি ও বাইরে পায়জামা পরে মসজিদে আগুন দিয়েছে, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশে অসংখ্য কোরান শরীফ পুড়িয়েছে। এত কোরান শরীফ বিশ্বে আর কোথাও পুড়েছে কিনা জানি না। কোরান পোড়ানোর জবাবদিহি জনগণের কাছে একদিন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে করতে হবে।
ব্লগে মহানবী (সা) সম্পর্কে কটূক্তিকর লেখা প্রচারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনকিলাব, আমার দেশ, নয়া দিগন্তসহ কয়েকটি পত্রিকা ব্লগের রেফারেন্স দিয়ে মহানবীর কটূক্তি হুবহু ছাপিয়ে দিল। কিন্তু এটা ছাপিয়ে প্রচার করাটাও পাপ। তিনি বলেন, যারা হাইতির ভূমিকম্পে নিহত লাশের ছবি হেফাজতের নিহত কর্মী বলে, মক্কা শরীফের গিলাফ পরিবর্তন নিয়ে মিথ্যাচার করে, কোরান শরীফ পোড়ায় তারা কেমন মুসলমান? সমগ্র জাতির উচিত এদের প্রতি ঘৃণা জানানো।
বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইদানীং আমাদের আস্তিক-নাস্তিকের কথা শুনতে হয়। যিনি দুপুর ১২টার পরে ওঠেন তিনি হলেন আস্তিক। আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, ফজরের নামাজ পড়ে কোরান তেলাওয়াত করে দিনের কাজ শুরু করি, অথচ আমরা হয়ে যাই নাস্তিক। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের মেয়ে, দেশেই জন্ম। আমার বাবা-দাদা সম্পর্কে আপনারা জানেন। আর একজন শিলিগুড়িতে একটি চা বাগানে জন্ম তাঁর বাবা ও দাদার পরিচয় কী?
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলুন’ শীর্ষক এ আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য গোলাম মওলা নক্সবন্দী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, আব্দুস সোবহান গোলাপ, রহমতউল্লাহ এমপি, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এমপি প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.