শ্বশুরের বিরুদ্ধে তল্লাশি পরোয়ানার মামলা by তানজিম আল ইসলাম

ঘটনাটি ঢাকার একটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা তল্লাশি পরোয়ানা মামলার পরিণতি সরেজমিনে দেখা। মামলাটি করেছেন এক যুবক তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে। যুবকের অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে তাঁর শ্বশুর স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া আটকে রেখেছেন। জানতে পারি, মেয়েটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের।


বছর দুয়েক আগে প্রেম করে বিয়ে করেন মা-বাবার অমতে। বিয়ের পর থেকে মা-বাবা কেউই এ বিয়ে মেনে নেননি। মেয়েটি তাই বিয়ের পর কোনো দিন বাবার বাড়ি যাননি। মেয়েটি একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রাগারাগির একপর্যায়ে তাঁর স্বামীকে তালাক দেন। মেয়েটির সঙ্গে তাঁর স্বামীর তালাকের পর মেয়েটি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাবা মেয়েকে কাছে টেনে নেন। কিছুদিন না যেতেই মেয়েটি তাঁর বাবার অজান্তে তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তাঁরা উভয়েই তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন। তাই তালাকের নোটিশ পাঠানোর তিন মাসের মধ্যেই তালাক প্রত্যাহার করে নেন সালিস পরিষদ থেকে। তালাক প্রত্যাহারের পর এ কথা মেয়েটি তাঁর বাবাকে জানান। মেয়েটি এ-ও বলেন, তিনি তাঁর স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চান। এ কথা শুনে মেয়েটির বাবা রেগে যান। মেয়েকে বারণ করেন, এই তালাক প্রত্যাহার তিনি মানেন না। মেয়েকে নিষেধ করেন স্বামীর কাছে ফিরে যেতে। কিন্তু মেয়ের ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার দৃঢ়তা দেখে একপর্যায়ে মেয়েটিকে গৃহবন্দী করে রাখেন তাঁর বাবা।
এ কথা জানতে পারেন মেয়েটির স্বামী। তিনি কোনো উপায় না দেখে তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে একটি সার্চ ওয়ারেন্টের (তল্লাশি পরোয়ানা) মামলা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েটিকে নিয়ে তাঁর বাবা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হন। মেয়েটি তাঁর স্বামীর কাছে গিয়ে বসেন। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর খাস কামরায় বাবা, মেয়ে এবং মেয়েটির স্বামী ও তাঁদের আইনজীবীদের ডেকে নেন। আমি এক পক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় যাই। ম্যাজিস্ট্রেট প্রথমেই মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি তাঁর স্বামীর কাছে যেতে চান কি না। মেয়েটি বলেন, তিনি যেতে চান। তারপর তাঁর স্বামীকে ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞেস করেন মামলার ঘটনা সম্পর্কে। সবশেষে মেয়েটির বাবাকে জিজ্ঞেস করেন ম্যাজিস্ট্রেট, ‘আপনার মেয়ে সাবালিকা। তিনি আইনসম্মতভাবে তালাক প্রত্যাহার করেছেন। আপনি আপনার মেয়ের সম্মতি ছাড়া তাঁকে আটকে রেখেছেন কেন?’ মেয়েটির বাবা কোনো কথা বলেন না। পরে আবার ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞেস করেন, ‘সাফ জবাব দিন। আপনার প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে আপনি আটকে রাখতে পারেন না।’ এমন সময় বাবার পক্ষের আইনজীবী মেয়েটির বাবাকে ফিসফিস করে বলতে থাকেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে বলুন, আপনার মেয়েকে আপনি ভুল বুঝে আটকে রেখেছেন। তাঁকে তাঁর স্বামীর কাছে যেতে দিতে কোনো আপত্তি নেই।’ আইনজীবীর কথামতো তিনিও বলতে থাকেন, তাঁর কোনো আপত্তি নেই, মেয়েকে তিনি স্বামীর কাছে যেতে দিতে চান। ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেন, ‘মেয়েটি বাবার জিম্মা থেকে মুক্ত হয়ে স্বামীর কাছে যাবেন। বাবার কোনো আপত্তি নেই।’
মেয়েটির বাবা খাস কামরা থেকে বের হয়ে আসেন। বলতে থাকেন, ‘এই মেয়ের মুখ আমি আর দেখতে চাই না।’ মেয়েটি সজোরে কাঁদতে শুরু করেন। বাবা চলে যাওয়ার পর মেয়েটিও তাঁর স্বামীর সঙ্গে ফিরে যান।

পাদটীকা: ফৌজদারি কার্যবিধির ১০০ ধারায় বেআইনি আটক ব্যক্তির জন্য সার্চ ওয়ারেন্ট জারির বিধান আছে। এ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এরূপ বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, কোনো ব্যক্তি এরূপ অবস্থায় আটক আছে যে এরূপ আটক একটি অপরাধ, তাহলে তিনি একটি তল্লাশি ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন এবং যে ব্যক্তিকে ওই ওয়ারেন্ট কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তিনি ওই আটক ব্যক্তির জন্য তল্লাশি করতে পারেন; এবং ওই ওয়ারেন্টে যেমন বলা হয়েছে, সেরূপ ওই তল্লাশি করতে হবে এবং আটক ব্যক্তিকে যদি পাওয়া যায়, তাহলে অবিলম্বে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে এবং তিনি ঘটনার পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত আদেশদেবেন।
tanzimlaw@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.