ক্ষতি ভয়ংকর-খুলুসহ চারজন জেলে

নিজেকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো ভয়ংকর ক্ষতিকর এক মাদকের নাম ইয়াবা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে, ইয়াবাসেবীরা জীবনের করুণ পরিণতির শিকার হচ্ছে। ইয়াবা সেবনের পর সাময়িক যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও এটি সেবনকারীদের ধ্বংস করে দিচ্ছে।


দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ইয়াবা বেশি উৎপাদিত হচ্ছে এবং থাইল্যান্ডে এর ব্যবহার বেশি।
আগে মাদকসেবীরা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টির জন্যই মূলত ইয়াবা সেবন করত। এখন ভিন্ন উদ্দেশ্যেও ইয়াবা সেবন করা হচ্ছে। তরুণীরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং স্লিম ফিগার ধরে রাখতে ইয়াবা সেবন করছে। তাদের ধারণা, ইয়াবা খেলে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয় এবং এতে কম খাওয়া হয়। আর কম খাবার খেলে ফিগার ঠিক থাকবে। এ ছাড়া ইয়াবার মধ্যে মাল্টিভিটামিন আছে বলেই মনে করে ইয়াবা সেবনকারীরা। কিন্তু মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ভ্রান্ত ধারণা। ইয়াবা একটি নেশাজাত মাদকদ্রব্য ছাড়া কিছুই নয়। ইয়াবা সেবনে শরীর স্লিম হওয়া, শরীরে মেদ না জমা, মন সতেজ থাকা, জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়ার যেসব কথা বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এর কোনোটাই পরীক্ষিত সত্য নয়। মূলত ইয়াবা তৈরির দুটি উপাদানেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।
চট্টগ্রাম ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ইয়াবা তৈরির উপাদান বিষয়ে বলেন, 'মূলত মেটঅ্যামফিটামিন ও ক্যাফেইনের সংমিশ্রণে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরি হয়।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইয়াবার সঙ্গে অন্য কোনো উপাদান যেমন হেরোইন, মরফিন, কোডিন ইত্যাদি মেশানো হয় কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়।
ইয়াবা খেলে কী হয়- জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, এই ট্যাবলেট খেলে নিদ্রাহীনতা, ঝিমুনিভাব, দুঃশ্চিতা বাড়ে। পাশাপাশি হৃদস্পন্দন বাড়ে এবং মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালীর ক্ষতি হয়, যা থেকে মারাত্মক রক্তরক্ষণ হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
খুলুসহ চারজন কারাগারে, রিমান্ড শুনানি আজ : চট্টগ্রামে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ইয়াবা গডফাদার আবদুর রশিদ খুলুসহ চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার তাঁদের রিমান্ড শুনানি হবে। গতকাল শনিবার কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেপ্তার চারজনের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবদুর রহমানের আদালতে হাজির করার পর আদালত এই আদেশ দেন।
গত শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর আসাদগঞ্জ এলাকার একটি গুদাম থেকে দুই লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন আবদুর রশিদ খুলু, সঙ্গে তাঁর ছেলে সাবি্বর আহমদ, শ্যালক আতাউল করিম ও কর্মী মোহাম্মদ ইসমাইল।
র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৭-এর যৌথ অভিযানে দেশের সবচেয়ে বড় মাদক চালানটি আটকের পর এখন এই ব্যবসায় আর কারা জড়িত আছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এদিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত মামলায় গুদামটির মালিক ও পশ্চিম পটিয়ার বাসিন্দা আবদুল মালেককে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদকে।
কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সদীপ কুমার দাশ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে হাজির করার পর আদালত চারজনকেই কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজ রবিবার তাদের রিমান্ড শুনানি হবে।'
র‌্যাব-৭-এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর জিয়াউল আহসান সরোয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, মামলাটি র‌্যাব তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে গতকাল শনিবারই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'র‌্যাব ইয়াবা গডফাদারদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করবে। এ ছাড়া গডফাদাররা কিভাবে এসব মাদক দেশে আনছে, এর সঙ্গে কারা যুক্ত- সব বিষয়ই তদন্তে বের করা হবে।'

No comments

Powered by Blogger.