অনিয়মের জন্য ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই-প্রিমিয়ার ব্যাংকের তথ্য গোপন

প্রকৃত তথ্য গোপন করে বাণিজ্যিক অবস্থা ভালো দেখানোর চর্চাটি নতুন নয়। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের চর্চা কখনো বা বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণ হয়েছে। বাংলাদেশেও এই অপচর্চার উপস্থিতি মাঝেমধ্যে লক্ষ করা যায়। বিষয়টি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।


হালে দেশের বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রিমিয়ার ব্যাংক খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে এই অগ্রহণযোগ্য কাজটি করেছে। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের মাত্র দেড় শতাংশকে খেলাপি হিসেবে উপস্থাপন করেছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে, এই হার ১৩ শতাংশের বেশি। এভাবে খেলাপি ঋণ কম দেখিয়ে ব্যাংকটি মুনাফাও বাড়িয়ে দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে একদিকে আমানতকারীদের সঙ্গে, অন্যদিকে ব্যাংকটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
কিন্তু আশ্চর্যজনক হলো, এই গুরুতর অনিয়মের বিষয়টি উদ্ঘাটন করার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি; বরং ভুল সংশোধনে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে, যা নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে কার্যত প্রিমিয়ার ব্যাংকের গুরুতর অনিয়মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলেই মনে করা যেতে পারে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ধরনের কাজ অনুচিত। তা ছাড়া এত বড় অনিয়ম ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া হয়েছে বলে ভাবার সুযোগ কম। আর তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে—বিশেষ করে, বাণিজ্যিক ব্যাংকটির পর্ষদ চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন নেতা। বস্তুত বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিতে অতীতে একাধিকবার প্রিমিয়ার ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে; বিশেষ করে ২০০৫ সালে ব্যাংকটির শেয়ার ছাড়া নিয়ে বিরাট কেলেঙ্কারির কথা সর্বজনজ্ঞাত। এ জন্য তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরও ব্যাংকটিতে অনিয়ম করার প্রবণতা থেমে নেই। খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করা এর সর্বশেষ প্রমাণ।
কিন্তু এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক কঠোর ব্যবস্থা না নিলে তা ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হয়। অনিয়মকারীরা উৎসাহিত হয়। এতে আমানতকারী ও শেয়ারধারীরা বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বোঝেন না বা জানেন না, তা নয়। অতীতে সাউথইস্ট ব্যাংকে এই ধরনের, কিন্তু এর চেয়ে তুলনামূলক ছোট অনিয়মের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকটির পর্ষদে পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এ যাত্রায় এসবের ব্যত্যয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

No comments

Powered by Blogger.