শিশুর জন্ম নিবন্ধন যেভাবে করবেন by নাঈমা আমিন

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য দেশের বাইরে যাবেন তিরানা (২৯)। প্রথমেই তিনি পাসপোর্ট করতে গেলেন পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারলেন, অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে তাঁর জন্ম নিবন্ধন সনদ লাগবে, যা তাঁর কাছে ছিল না।


এত দিন কোনো কাজে না লাগায় তিনি জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেননি, আর এটা সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও তিনি জানেন না। ফলে তাঁকে পড়তে হয় ভীষণ বিপাকে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেড়েছে জন্ম নিবন্ধনের চাহিদা। বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-লিঙ্গনির্বিশেষে সব ব্যক্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ-সুবিধা পেতে এই জন্ম নিবন্ধন করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন করতে হয়।

জন্ম নিবন্ধন জরুরি কেন?
সাধারণত পাসপোর্ট করতে, বিবাহ নিবন্ধন করতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে, সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে, ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে, জমি নিবন্ধন করতে, ট্রেড লাইসেন্স করতে, টিন সার্টিফিকেট করতে, ট্যাক্স প্রদানে, ব্যাংকঋণ পেতে, ব্যাংক হিসাব খুলতে, বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল প্রদানে, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ-টেলিফোন সংযোগ নিতে—বয়স প্রমাণের জন্য এসব জায়গায় জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হয়। এককথায় জাতীয় পরিচয়পত্র যেসব কাজে লাগে, সেসব ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনও জরুরি।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয়, তবে আপাতত কোনো ফি দিতে হচ্ছে না। তবে ১৮ বছর বা তার বেশি হলে আলাদা করে ফি দিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন করতে হলে জেনে নিন
জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্র সাধারণত সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এসব দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আপনাকে নিবন্ধন সনদ তৈরি করতে সহায়তা করবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে আপনার সংশ্লিষ্ট এলাকার দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। যেমন: আপনি যদি উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোরেশনের নাগরিক হন বা আপনার সন্তান যদি ডিসিসির অন্তর্ভুক্ত কোনো এলাকায় জন্মগ্রহণ করে, তবে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আপনি আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর যেকোনো একটিতে যোগাযোগ করতে পারেন। আর যদি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী অথবা স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা আপনাকে এ সনদ দিতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বিনা মূল্যে একটা জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে পারেন। আবেদনপত্রে ব্যক্তির বিবরণ (নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, জন্মস্থান), বাবা-মায়ের বিবরণ, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, আবেদনকারীর প্রত্যয়ন ইত্যাদি ঘর পূরণ করতে হবে।
তবে নিবন্ধনকারীর বয়স ১৮ বা তাঁর বেশি হলে তিনি নিজে ৬ নম্বর কলামে স্বাক্ষর করবেন। আবেদনপত্রটি জমা দিলে আপনাকে নিচের দিকের একটি অংশ কেটে দেবে। এ অংশটি আবেদনপ্রাপ্তির রসিদ হিসেবে ধরা হয়। সেখানে জন্মসনদ দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.