আলোচনা সভায় বিচারপতি হাবিবুর রহমান-সাংবাদিকদের বিভক্তির সুযোগ নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা

সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিভক্তির সুযোগ নিচ্ছে রাজনৈতিক ও সামাজিক দুর্বৃত্তরা। নিরাপত্তার অভাবে রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে মুক্ত সাংবাদিকতার দ্বার।


এ অবস্থায় সাংবাদিকেরা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে এগিয়ে এলে সুশীল সমাজও তাঁদের পাশে দাঁড়াবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘কাক নির্যাতিত হলে সহকর্মী কাকেরা তার সমর্থনে চিৎকার করে। কিন্তু সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সহকর্মীদের কাছ থেকে অনেক সময় কাকসদৃশ ব্যবহারও পাওয়া যায় না। জাতির বিবেক বলে দাবিদার সাংবাদিকেরা দুই শিবিরে বিভক্ত। যতই দিন যাচ্ছে, বিভক্তি আরও প্রকট হচ্ছে। মনে হচ্ছে, সারা বাংলাদেশই দুই শিবিরে বিভক্ত।’
বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস উপলক্ষে জার্নালিজম ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (যাত্রী) তাদের সম্মেলনকক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করে।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সংবাদপত্রে বিনিয়োগ বিত্তবানদের জন্য আকর্ষণীয় মৃগয়া। সেই মৃগয়ার শিকারি অনেক সময় আশুপ্রাপ্তি, চমকসৃষ্টি কিংবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ছাপার অক্ষরে কিছু প্রকাশ করে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘এখনো সম্পাদক বা প্রকাশকের একটি সরকারি বা সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে। এই সম্মানের আড়ালে তাঁরা কার কী স্বার্থ উদ্ধার করছেন, তা খুব কম পাঠকের জানার সুযোগ হয়। নব্বইয়ের পর এ দেশের জাতীয় ও ছাত্ররাজনীতির এক বিরাট অংশ সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নের পঙ্কে নিমজ্জিত হয়েছে। তাই আজ ঋণখেলাপি ও ভূমিদস্যু থেকে শুরু করে সামরিক, বেসামরিক নানা গোয়েন্দা সংস্থার অর্থসহায়তায় সংবাদপত্র প্রকাশনার অভিযোগ শোনা যায়।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংবাদমাধ্যম সবার কাছ থেকে নসিহত পেয়ে থাকে। ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে বস্তুনিষ্ঠতা ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার নসিহত পেয়ে থাকে। আবার ক্ষমতালিপ্সুদের কাছ থেকে ‘সাহসী সাংবাদিকতার’ ডাক আসে। এখানে কেনাবেচা হয়। হুমকিতে অনেক সময় পাতা নড়ে। কিন্তু সংবাদপত্র মানসম্পন্ন না হলে সরকারের বিজ্ঞাপন দাক্ষিণ্য পেয়েও টিকে থাকতে পারবে না, পাঠকের মন পাবে না।
বিচারকালে বা তদন্তাধীন অবস্থায় যে তথ্য বেরিয়ে আসে, রায়ের আগে তা আলোচিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয় বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, আজকাল অপরাধ তদন্তকালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বেড়েছে। এসব সংবাদে মনের মাধুরী বা বিষ মেশানোর পর শেষ পঙিক্ততে লেখা হয়, এ ব্যাপারে তদন্তকারীকে একাধিকবার ফোন করেও সত্যতা যাছাই করা সম্ভব হয়নি।
আলোচনা সভায় উপস্থিত সাংবাদিকেরা বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি ও দলবাজির মনোভাব স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নষ্ট করছে। সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের পর তাঁদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়নি। বরং তাঁদের সন্তানকে নিয়ে অপসাংবাদিকতা হয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাক এলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর উপদেষ্টা সম্পাদক জগ্লুল আহেমদ চৌধূরী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বিসিডিজেসির সভাপতি নাইমুল ইসলাম খান, ইউনেসকোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিচি ওইয়াসু, একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা বিভাগের প্রধান সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাংবাদিক সাইফুল হুদা প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন যাত্রীর প্রধান নির্বাহী জামিল আহমেদ।

No comments

Powered by Blogger.