বিলীন হচ্ছে নদী

বেসরকারি উদ্যোগকেও স্বাগত জানানো হোক বাংলাদেশের নদী এখন আর অর্থনীতিতে আগের মতো অবদান রাখছে না। নদীর করুণ দশার কারণে বাংলাদেশকে এখন নদীমাতৃক বলতেও দ্বিধা হয়। উজান থেকে ধেয়ে আসা বালু, মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য আর দখলদারিত্বের কারণে নদী এখন জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে।


পাল তোলা নৌকার পরিবর্তে ইঞ্জিনের সুবিধা নৌকাকে উন্নত করতে সক্ষম হলেও নদীর ক্ষীণধারায় সেই নৌযানই অচল পড়ে থাকে কোথাও কোথাও। দীর্ঘদিন ধরে এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা বিরাজ করার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দেশের মানুষের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা, প্রকৃতির খেয়ালে পানি বাহিত বালুর সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত দুর্যোগও। এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের আট শতাধিক নদীকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে একসময় ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথের অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে সেই নৌপথ গিয়ে ঠেকে মাত্র এক হাজার ৮০০ কিলোমিটারে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে পণ্য পরিবহনেই শুধু ব্যাঘাত তৈরি হয়েছে তা নয়, আমাদের প্রধান উৎপাদন খাত কৃষিকেও আঘাত করছে। পণ্য পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা, কৃষিক্ষেত্রে পানির ব্যবহারে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি রাজধানীর পানি সরবরাহেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে এই নাব্যতা হারানোর কারণে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার নদী ড্রেজিং করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশের ৪০৫টি নদীকে ড্রেজিং করার জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার যে মহা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের গতিকে সন্তোষজনক বলার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের অবহেলার চিত্রই ফুটে ওঠে ড্রেজিং-ব্যবস্থার দিকে তাকালে। স্বাধীনতার আগে সরকারের হাতে ছিল মাত্র পাঁচটি ড্রেজার। ১৯৭২ সালে দুটি ড্রেজার কেনা হয় আর বর্তমান সরকার এসে কেনে আরো দুটি। অর্থাৎ গত চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে মাত্র চারটি ড্রেজার কেনা হয়েছে সরকারের মাধ্যমে। এই স্বল্প হাতিয়ার দিয়ে কি দেশের নদীগুলোকে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব? এ সমস্যা যেভাবে প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা সমাধান করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এ ক্ষেত্রে যুক্ত করা অপরিহার্য। আশার কথা, বসুন্ধরা গ্রুপ এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ প্রচেষ্টা কার্যকর হলে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র কিংবা মেঘনার মতো দেশের ছোট নদ-নদীগুলোও আগের সেই প্রাণ ফিরে পাবে। সমন্বিত পরিকল্পনা এবং সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের নদীগুলো খনন হলে এর প্রভাব পড়বে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে। সে ক্ষেত্রে নৌপথে আবারও পাল তোলা নৌকা চলার মতোই হয়তো ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলবে। গতি পাবে দেশের উন্নয়নের যাত্রাও।

No comments

Powered by Blogger.