মেক্সিকান চিংড়ি ফুল by মোকারম হোসেন

বেশ কয়েক মাস আগে আমাকে রেডউড ট্রির খবরটি জানিয়েছিলেন বৃক্ষপ্রেমিক আমাতুল আজিজ। তখন আগাম বলে রেখেছিলেন, এই গাছের ফুল ফুটলে আমাকে খোঁজ জানাবেন। যথারীতি ফুল ফোটার খবর জানিয়েছিলেন। তাঁর লালমাটিয়ার বাসায় গিয়ে বেশ কিছু ফুলের পাশে পাওয়া গেল এই ফুল।


গাঢ়-গোলাপি রঙের ফুলগুলোর পাপড়ি যেন পাখির পালক। দূর থেকে বাগানবিলাসও মনে হতে পারে। গাছটি তাঁর বোন চট্টগ্রামের একটি নার্সারি থেকে এনে দেন। ফুল বেশ চেনা মনে হলেও সঠিক শনাক্তকরণের জন্য অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার শরণাপন্ন হলাম। তিনি জানালেন, গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Justicia brandegeeana (Syn. Beloperone guttata)। প্রচলিত কোনো বাংলা নাম নেই। কারণ, এটি আমাদের প্রাকৃতিক গাছ নয়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সরদার নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘এটি আলংকারিক বৃক্ষ হিসেবেই অনেকে ঘরের বারান্দায় কিংবা একচিলতে বাগানে চাষ করছেন। এই গাছ আমাদের দেশে এসেছে অতি সম্প্রতি।’ এদের আদি আবাস মেক্সিকো, গুয়েতেমালা ও হন্ডুরাস। ইংরেজি নাম Maxican Shrimp Plant বা Shrimp Plant, অর্থ চিংড়ি গাছ। ফুলের গড়ন চিংড়ি মাছের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় সম্ভবত এমন নামকরণ। সারা পৃথিবীতে এদের অনেক আবাদিত জাত দেখা যায়। তাতে বর্ণবৈচিত্র্যও অঢেল।
গুল্মশ্রেণীর গাছ। শাখাগুলো ছড়ানো ধরনের। ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কাণ্ড কাষ্ঠল ও দাগবিশিষ্ট। পাতা ডিম্বাকৃতির, দুই থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার হতে পারে। পত্রবৃন্ত আকস্মিকভাবে ক্রম সূক্ষ্ম থেকে সরু, গাঢ় সবুজ রঙের, উভয় পিঠই রোমশ, শিরা ছয় থেকে সাত জোড়া। মঞ্জরিপত্র ডিম্বাকৃতির, প্রায় দেড় সেন্টিমিটার সাদা রোমযুক্ত গোলাপি লাল রঙের। বৃত্যাংশ পাঁচটি, ছয় মিলিমিটার লম্বা, নিম্নাংশে যুক্ত, হালকা সবুজাভ-সাদাটে। পুংকেশর দুটি, দেড় সেন্টিমিটার লম্বা, নলাকার ও সাদা, ভেতরের দিকে বিন্দুর মতো রক্তাভ বর্ণের, ওপরে দ্বিখণ্ডিত, নিচে ত্রিখণ্ডিত; ভেতর এবং বাইরের পিঠ রোমশ।
জন্মস্থানে ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি হলেও আমাদের দেশে বর্ষা থেকে হেমন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ফুল পাখি ও প্রজাপতিদের আকৃষ্ট করে। বংশবৃদ্ধি কন্দ ও বীজে। সাধারণত টবেই চাষ।

No comments

Powered by Blogger.