সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম শর্ত-নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের কারণে নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন যেন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হবে নির্বাচন কমিশন। যদি তা-ই হয়, তাহলে সরকার ও নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীলতা দূর করার জন্য কমিশনের শক্তি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যই এটা প্রয়োজন।
এটা অনস্বীকার্য যে আগের তুলনায় এখন নির্বাচন কমিশন অনেক বেশি শক্তিশালী। সরকারের পক্ষে নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার সুযোগও অনেক কমে গেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনেও বিরোধী দল প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছে। এই পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বাড়ায়, সন্দেহ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের আরও শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
কমিশনের শক্তি বৃদ্ধির জন্য তার সচিবালয়ের শক্তি বৃদ্ধি করা জরুরি। কারণ নিজস্ব লোকবল ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কঠিন। এদিকে এখনো ঘাটতি রয়েছে। সচিবালয় যত স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, তার কাজ তত বেশি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে, কমিশনের ওপর অর্পিত বিদ্যমান ক্ষমতা প্রয়োগে যেন সরকারের দিক থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করা দরকার। সংবিধানের ১২০ ও ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার জনবল সরবরাহের ব্যবস্থা করবে এবং কমিশনের দায়িত্ব পালনে সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবে। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, এসব ক্ষেত্রে সব সময় সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনের সময় সরকারি কর্মকর্তাদের দলনিরপেক্ষ কাজ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু প্রশাসনের নির্দলীয় চরিত্র এখনো নিশ্চিত হয়নি। ফলে নির্বাচনের সময় তাদের অনেকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৪(ই) বিধান অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া জেলা প্রশাসক, জেলা জজ ও পুলিশ সুপারদের বদলি করা যায় না। কিন্তু অনেক সময় সরকার এই বিধান মানে না। এ অবস্থায় যদি নির্বাচনের সময় সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বিধি প্রয়োগের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে দেওয়া হয়, তাহলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যেন দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি কাজ না করে তা নিশ্চিত করাও জরুরি। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে কমিশনার নিয়োগে বিধি প্রণয়নের কথা রয়েছে। কিন্তু এ রকম কোনো বিধি এখনো প্রণীত হয়নি। সংসদের কার্যনির্বাহী পরিষদ বা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের বিধি করা যেতে পারে। সেখানে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। যদি তা হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবে এবং তাদের পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে। বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.