মহাসমাবেশে খালেদা জিয়ার আলটিমেটাম-১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক

আগামী ১০ জুনের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের আলটিমেটাম দিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে ১১ জুন ঢাকায় আবার মহাসমাবেশ করা হবে।


সেখান থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তখন সরকারকে দাবি পূরণ করতে হবে, অন্যথায় ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চারদলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারকে এই হুঁশিয়ারি দেন খালেদা জিয়া। বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি চারদলীয় জোট সম্প্রসারণ করা হবে বলেও ঘোষণা দেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। নতুন জোটের পক্ষ থেকে বলছি, আগামী ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে পুনর্বহাল না করা হলে ১১ জুন আবারও ঢাকায় মহাসমাবেশ ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।' ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী করা হবে, বক্তব্যে তাও তুলে ধরেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে মহাসমাবেশে লোকজন আসতে থাকে। দুপুর ১২টার মধ্যে সমাবেশস্থল ভরে যায়। আড়াইটার দিকে মঞ্চে ওঠেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এর আগে দুপুর দেড়টায় বিএনপিসহ ১৬ দলের নেতারা মঞ্চে উপস্থিত হন। মহানগর পুলিশ থেকে ১১টি শর্ত দিয়ে সমাবেশের যে সীমানা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সেই সীমানা বহাল থাকেনি। লাখো মানুষের জমায়েত হওয়ায় নয়াপল্টন থেকে মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর হয়ে মালিবাগ মোড় এবং অন্যদিকে বিজয়নগর হয়ে পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন বিএনপি, জোটের শরিক ও সমমনা দলের নেতা-কর্মী এবং দলের সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী। দুপুর দেড়টার দিকে মহাসমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

বর্তমান সরকারকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী করবে, তা জনসভায় তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, 'জনপ্রতিনিধিদের হাতে আরো ক্ষমতা দেব। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনব।' তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এক কোটি গরিব মানুষকে রেশন ব্যবস্থায় আনা হবে। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা হবে। ইসলামী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা হবে। গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি করে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত করা হবে। নতুন কলকারখানা এবং বন্ধ কারখানাগুলো চালু করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, 'কিভাবে দেব, আমাদের কাছে টেকনিক আছে, এখন বলব না। সময় হলেই বলব।' যুবকদের কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে তা পূরণের বিষয়েও একই কথা বলেন তিনি।
সরকারপক্ষের ব্যাপক বাধা সত্ত্বেও মহানগরের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলা- নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, মুরাদনগর, নরসিংদী, কেরানীগঞ্জ, সাভার, দোহার, নবাবগঞ্জ, টঙ্গী, কালীগঞ্জ থেকে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় ছবিসংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। কারওয়ান বাজার, মগবাজার, বাবুবাজার, মতিঝিল, রমনা, এলিফ্যান্ট রোডসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশস্থলে আসার পথে পুলিশের বাধা ও ছাত্রলীগকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পরও বিপুল লোকসমাগম হয় মহাসমাবেশে। মুরাদনগরের এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাঁদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন।
খালেদা জিয়ার সাদা পাজেরো গাড়িটি সমাবেশ মঞ্চের পাশে নিয়ে আসতে বেশ বেগ পেতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের। অফ হোয়াইট রঙের শাড়ি পরা খালেদা জিয়া মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে সমবেতদের অভিবাদনের জবাব দেন। মঞ্চে খালেদা জিয়া বসেন মাঝখানে। এক পাশে বসেন বিএনপি নেতারা, অন্য পাশে ১৬ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। নয়াপল্টন থেকে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়ক সাজানো হয় ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে। 'ঢাকা চলো' স্লোগান লেখা বড় বড় বেলুন ওড়ানো হয়। মঞ্চের ব্যানারে লেখা হয়, 'নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ও অযোগ্য-তাঁবেদার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চারদলীয় জোট ও সমমনা দলের উদ্যোগে মহাসমাবেশ'। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিও শোভা পায় ব্যানারে। মূল মঞ্চের চারপাশে দলীয়ভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। দলের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের জন্য মঞ্চের নিচে পশ্চিম দিকে আলাদাভাবে বসার জায়গা করা হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১০ হাজার সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা হলুদ ও সবুজ গেঞ্জি আর লাল টুপি মাথায় দিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব চিকিৎসা শিবির স্থাপন করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। মহানগর পুলিশের বেঁধে দেওয়া সীমানা ফকিরাপুল ও নাইটিংগেল মোড়ে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেন। সেখানে একটি ডিজিটাল পর্দার আশপাশে কয়েক শ মানুষ সমবেত হয়।
গতকালের মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়; জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সোবহান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু, বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আমীন বেপারী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ কামাল উদ্দিন সবুজ, মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, মসিউর রহমান, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মু. দেলোয়ার হোসেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী, শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হারুন অর রশীদ বাদল প্রমুুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল।
এ ছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা, কেন্দ্রীয় নেতা, মহিলা দল, যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে এবং ছোটখাটো কিছু বিশৃঙ্খলা ছাড়া মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।
পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে : পুঁজিবাজারের অর্থ লুট হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, শেয়ার মার্কেটে এত বড় লুট হয়ে গেল, তাদের কারো বিচার হয়নি, বরং তাদের আরো অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা লুট করেছে, তারা এত ক্ষমতাবান, তাদের নাম প্রকাশ করার ক্ষমতা তার নেই। তাহলে বুঝতে বাকি থাকে না, এই ক্ষমতাবান ব্যক্তি কারা। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন যারা জড়িত, তাদের জনগণ চিনে ফেলেছে। তাদের একদিন বিচার করা হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা মুখ খুলুন, নইলে পরে জনরোষে পড়বেন। জনগণের হাতে লাঞ্ছিত হবেন।'
ভেতরে ঢুকে হত্যা করছে বিএসএফ : সীমান্ত পার হয়ে বিএসএফ বাংলাদেশিদের হত্যা করছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই সরকারের আমলে বর্ডার সিকিউরিটি বলে কিছু নেই। সীমান্ত কেন অরক্ষিত? আমরা কথা দিচ্ছি, ক্ষমতায় এলে বিজিবিকে শক্তিশালী করব।'
কোথায় তিস্তা চুক্তি, কোথায় পানি : খালেদা জিয়া বলেন, 'নতজানু' পররাষ্ট্রনীতির জন্য সরকার দেশের স্বার্থ আদায় করতে পারছে না। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির কথা বলা হয়েছিল, কোথায় চুক্তি, কোথায় চুক্তির পানি? তিনি বলেন, 'আমরা বলতে চাই, আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। কিন্তু একতরফা দিয়ে যাব, বিনিময়ে কিছুই পাব না, সেটা হবে গোলামি। এই সরকার গোলামির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। এই দুর্বল-নতজানু সরকারকে বিদায় করতে হবে।'
কুইক রেন্টালের নামে লুটপাট চলছে : খালেদা জিয়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট অবসানে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বলেন, লোডশেডিংয়ে আজ জীবন অতিষ্ঠ। অথচ কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে দলীয় লোকজন ও আত্মীয়স্বজনকে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ দিতে নয়, লুটপাটের জন্যই এই কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের কাজ বিনা দরপত্রে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সমালোচনাও করেন তিনি।
আয়নায় নিজের মুখ দেখুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, 'তাঁর বক্তব্যের ভাষা রুচিশীল মানুষের ভাষা হতে পারে না। তিনি বলেন, তাঁদের নেতা-নেত্রীরা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। কোনো রুচিসম্পন্ন মানুষ এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে পারেন না। আমি এসব বক্তব্যের জবাব দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দয়া করে আপনার বিবেক বলে যদি কিছু থাকে, তাহলে আয়নায় নিজের মুখ দেখুন। দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান। তাই এমন কিছু বলবেন না, যাতে দেশের মানুষ লজ্জা পায়।'
সাংবাদিকদের আন্দোলনে সমর্থন : সরকার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, সত্য খবর দেয় বলে গণমাধ্যমকে ভয় পায় সরকার। এই সময়ে ১৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সবশেষ খুন হয়েছেন সাগর-রুনি। এই হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার আর হবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই দায়িত্ব নিয়ে এখন বলছেন, আলামত মুছে গেছে। আলামত মুছে ফেলে এখন বলেন, মুছে গেছে! সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যেতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়ে তাতে বিএনপির সমর্থন থাকবে বলে জানান তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির এই মহাসমাবেশ লাইভ টেলিকাস্ট করতে চেয়েছিল এনটিভি, ইটিভি ও বাংলাভিশন। কিন্তু তাদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
দেশে বাকশালী শাসন চলছে : খালেদা জিয়া বলেন, বিচার বিভাগ আজ সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। অনেক বিচারক চাইলেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, দেশে এখন বাকশাল চলছে। গণতন্ত্র এখন বন্দি, একজনের শাসন চলছে। এই গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
আমাদের বিদেশি টাকার প্রয়োজন হয় না : আইএসআইয়ের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে নির্বাচন করাসংক্রান্ত সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, 'আমাদের বিদেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। আমাদের জনগণ রয়েছে।' উল্টো আওয়ামী লীগই বিদেশি অর্থে নির্বাচন করেছিল বলে দাবি করেন তিনি।
বারবার কর্মসূচি দেব : খালেদা জিয়া বলেন, 'মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস। এই মাসে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তাই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বক্তব্য শুরু করছি। সরকার ভীত হয়ে তিন দিন আগেই সারা দেশকে ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এর পরও লোক ঠেকাতে পারেনি। যাঁরা দূর-দূরান্ত থেকে অনেক কষ্ট করে এসেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'এই সরকার যদি জনপ্রিয় হয়ে থাকে, তাহলে কেন এত ভয়? সরকারের সবচেয়ে বড় ভয় জনগণ। তারা জন-আতঙ্কে ভুগছে। বারবার কর্মসূচি দেব। বারবার জনগণ আসবে। কতবার আপনারা বাস বন্ধ করবেন, ট্রেন-লঞ্চ বন্ধ করবেন?'
মহাসমাবেশে পদে পদে বাধা দেওয়া হয়েছে দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, 'সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তাই তাদের এত ভয়। সরকার এখন আতঙ্কে ভুগছে। তাদের ভয় এখন জনগণকে। এতই যদি ভালো কাজ করেন, উন্নয়ন করেন, তবে কেন এত ভয়?'
মহাসমাবেশের আগে গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে অন্তরিন সবার মুক্তি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার।

No comments

Powered by Blogger.