কোনো 'অঘটন' ঘটেনি

নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, সংঘর্ষসহ গোয়েন্দাদের নানা অঘটনের আশঙ্কা এড়িয়ে অবশেষে নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বিরোধী দলের বহুল আলোচিত মহাসমাবেশ। তবে এই কর্মসূচি ঘিরে গতকাল সোমবার রাজধানীতে ছিল ঠাস বুনট নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মহাসমাবেশ এলাকার বাইরেও চলেছে কঠোর নজরদারি।


দুই শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে পরিস্থিতি। আবদুল গণি রোডে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমে বসে সিসিটিভির মাধ্যমে নিরাপত্তা কার্যক্রম মনিটর করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২০ হাজার সদস্য তৎপর ছিলেন। এর মধ্যে পুলিশের ১২ হাজার, র‌্যাবের তিন হাজার ও বিজিবির তিন হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। মূলত নয়াপল্টনে সমাবেশস্থল ঘিরে ছিল কঠোর নজরদারি। এর পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০০ সিসিটিভি ব্যবহার করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকার সড়কের মুখে সবচেয়ে বেশি ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ডিএমপির আটটি বিভাগের বিশেষ বিশেষ পয়েন্টসহ হামলা-ভাঙচুর-হাঙ্গামা হতে পারে এমন সব এলাকায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, মহাসমাবেশের সার্বিক অবস্থা জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ গতকাল সকাল থেকে আবদুল গণি রোডের কন্ট্রোলরুমে অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি) নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনের মঞ্চ থেকে শুরু করে ওই এলাকায় নেতা-কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীদের অবস্থান দেখতে পান। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মিছিল, ছাত্রলীগের মিছিলসহ সব কিছু প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় কোথাও কোনো সংঘর্ষ ও হট্টগোল হলে বা সম্ভাবনা দেখা দিলে কন্ট্রোলরুম থেকে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের ডিসিদের নির্দেশনা মোতাবেক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গতকাল সকালে কাকরাইল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার মোড়, শাহবাগ, মগবাজার, বনানী, গুলশান ও মহাখালী এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান করেছে। রাস্তায় টহল দিয়েছে র‌্যাব ও বিজিবির টিম।
এদিকে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের আগে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সামনে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এলিফ্যান্ট রোডে বিএনপির একটি মিছিলের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনা ছাড়াও রাজধানীর কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, সদরঘাট ও মগবাজার এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্ন ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকাসহ পুরো রাজধানী সিসিটিভির আওতাভুক্ত ছিল। সিসিটিভি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দিতে সহায়ক হিসেবে স্থাপন করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। পরে চিত্র দেখে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন অর্ধ শতাধিক পুলিশ সদস্য। নির্মাণাধীন উড়াল সড়কের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন। ১২টার পর থেকে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী মোড়ে থেকে দেখা গেছে বেশির ভাগ মানুষ হেঁটে যাচ্ছেন। ওই সময় যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদের মাঝামাঝি উত্তর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল হাইস্কুল মার্কেটের সামনে বসে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
৫০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ মুরাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিরোধী দল অযৌক্তিকভাবে মহাসমাবেশ ডেকেছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আমরা এখানে বসে আছি।'
৭০ জামায়াতকর্মী আটক : মহাসমাবেশে আসার পথে জামায়াতের ৭০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। রমনা, যাত্রাবাড়ী, ধানমণ্ডি, পল্টন, দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, কলাবাগান, বাড্ডা, সূত্রাপুর ও হাজারীবাগ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুলিশ স্বীকার করেনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, বেশ কিছু সন্দেহভাজনকে আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশে আগতদের গ্রেপ্তারের কোনো ঘটনা নেই।

No comments

Powered by Blogger.