ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাজেট-ব্যর্থতার জবাব নেই

বাজেটের আকার দিনে দিনে বড় হবে, এটাই স্বাভাবিক। গতবারের তুলনায় এবার ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে যেখানে বাজেট ছিল দুই হাজার ১৭১ কোটি টাকা, সেখানে চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে এর পরিমাণ হয়েছে দুই হাজার ৭১৫ কোটি টাকা।

নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করা এবং ঢাকা মহানগরের নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাজেটের আকার বাড়ানোর নিশ্চয়ই বিকল্প নেই। কিন্তু এর সঙ্গে অর্থ খরচের সক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। বড় বাজেট মানেই নাগরিকদের সেবার মান বৃদ্ধি বা উন্নয়ন—এমন কিছুর নিশ্চয়তা দেয় না। সেদিক থেকে দেখলে এই বাড়তি বাজেট নগরবাসীর জন্য কতটুকু স্বস্তি নিয়ে আসবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গত অর্থবছরে দুই হাজার ১৭১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এ-ই যদি বাস্তবতা হয়, তবে বাজেটের আকার বাড়িয়ে আসলে কী ফল পাওয়া যাবে? গত বছর বাজেটের অর্থ খরচ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন, অথচ এখন ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তা খানাখন্দে ভরা, বলা যায় চলাচলেরও অনুপযোগী। এত বড় ঢাকা শহরের কয়টি রাস্তায় সঠিকভাবে সড়কবাতি জ্বলে? রাস্তার মাঝে ময়লার স্তূপ বা ময়লা উপচে পড়া ডাস্টবিন কোথায় নেই? মেয়র তাঁর বাজেট বক্তৃতায় লোকবলের সমস্যার কথা স্বীকার করলেও দুর্নীতি আর অদক্ষতার অভিযোগগুলোর ব্যাপারে নীরব। মেয়র হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে বাহবা নিতে চাইছেন। কিন্তু ট্যাক্স না বাড়ানো কৃতিত্বের বিষয় নয়। নাগরিক সুবিধা পেলে ট্যাক্স দিতে জনগণের আপত্তি নেই।
এ কথা ঠিক যে, মহানগরের বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধা দেখার দায়িত্ব কেবল ঢাকা সিটি করপোরেশনের নয়, অন্যান্য সেবাপ্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে নগরবাসীর দুর্ভোগ অনেকখানি কমত। এই নগরের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা সরাসরি জড়িত। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ সিটি গভর্নমেন্ট করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সরকার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
ঢাকা মহানগরে কার্যকর নাগরিকসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন কী কী ভূমিকা পালন করবে, এ ক্ষেত্রে কী সমস্যা রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির লোকবল বা এর ক্ষমতা ও কাজের আওতা বাড়ানো—এগুলো সবই সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। তাই সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার দায় সরকারও এড়াতে পারে না। অনেক আগেই ডিসিসির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ মেয়র যেমন নগরবাসীর কাছে দায়বদ্ধ নন, তেমনি সরকারও নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিয়েও নির্বাচন করতে পারেনি স্থানীয় সরকারের অসহযোগিতার কারণে। যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.