‘সরকার রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভ ভেঙে দিয়েছে’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, সরকার রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভ—প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সংসদ ও গণমাধ্যমকে ভেঙে দিয়েছে। ফলে রাষ্ট্র চলছে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী। দেশের মানুষের কোনো অধিকার আর থাকছে না। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে চারদলীয় জোটের মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসনে দলীয়করণের কারণে কাজে গতি নেই। বিচার বিভাগে দলীয় লোক দেখে রায় দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ বিচার পায় না। সংসদ অকার্যকর, স্পিকারের ভাষায় এটা মাছের বাজার। আর গণমাধ্যমের ওপর নানা বিধিনিষেধ চলছে। গণমাধ্যমে সত্য লেখার কারণে এই সরকার ক্ষুব্ধ। অনেক গণমাধ্যম বন্ধও করে দেওয়া হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সরকারের ব্যর্থতার কারণে এরা দেশ-বিদেশে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। অগণতান্ত্রিক আচরণ ও দুর্নীতির কারণে এটা হয়েছে। তাদের এ অবস্থার কথা প্রতিবেশীরাও বুঝবেন। আপনারা দেখবেন, কিছুদিনের মধ্যে প্রতিবেশীরা আপনাদের পাশ থেকে সরে দাঁড়াবে।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তিনি সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, এই সরকার গত তিন বছরে দেশের জন্য কোনো কাজ করেনি। তারা প্রতিবেশী দেশের কাছে যেসব ওয়াদা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তা পূরণ করছে। তারা দেশ ও জনগণের জন্য কোনো কাজ করেনি বলেই এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এখন তারা জনগণকে ভয় পাচ্ছে।
মহাসমাবেশে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এই সরকারের তিন বছরে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। সরকারি দলের গুন্ডাবাহিনী নির্যাতন করছে, সীমান্তে ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার দেশের মানুষ ও সংসদকে না জানিয়ে ভারতকে করিডর দিয়েছে। কেউ জানে না, অথচ ভারতের ১২০ চাকার বিশাল যানবাহন দেশের ওপর দিয়ে চলছে। দেশের মানুষের গাড়ি কোথাও গেলে টোল দিতে হয়, কিন্তু ভারতের গাড়ির জন্য তা লাগে না।
বিএনপির নেত্রী বলেন, গরম শুরু হওয়ার আগেই লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে। দেশে বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করে গরিব দেশবাসীর অর্থে ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির নামে আত্মীয় ও দলীয় লোকদের লুটপাটের ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেডরুমে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না। আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া প্রশ্ন রাখেন, আলামত কারা নষ্ট করেছে? সরকারই আলামত নষ্ট করে আবার তা ঘোষণা করছে। আসলে এ সরকার বেডরুম, বাইরে কোথাও নিরাপত্তা দিতে পারে না।
খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার দেশের মানুষকে অসম্মান করছে। দেশের অনুষ্ঠানে বিদেশের নোবেল বিজয়ীদের অতিথি করে আনা হয়। অথচ আমাদের দেশেও নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস রয়েছেন। তাঁকে সরকার কী রকম অপমান করেছে, তা সবাই দেখেছেন। এতে বিশ্বে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।
খালেদা জিয়া প্রশ্ন রাখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় আমাকে ও বিরোধী দলকে আক্রমণ করেন, তা কি শোভনীয়?’ প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়—এমন কথা বলবেন না। আপনি বলেছেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি কোলে তুলে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে?” তাহলে আপনার বক্তব্য অনুযায়ী আপনি কি স্বীকার করছেন যে ফখরুদ্দীন-মইন আপনাকে ওভাবে ক্ষমতায় বসিয়েছে?’
ক্ষমতায় গেলে যা করবেন: খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় গেলে দেশের এক কোটি দরিদ্র মানুষকে রেশনিংয়ের আওতায় আনা হবে। দেশের সব রকম দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিচার বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। সংবিধানের অসংগতিপূর্ণ বিধান বাতিল করা হবে। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বাড়ানো হবে। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্য কমিয়ে আনা হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে নতুন শিল্পকারখানা চালু ও বন্ধ থাকা শিল্পকারখানা চালু করা হবে। ঢাকায় যানজট নিরসনের জন্য মেট্রোরেল ও উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হবে। পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে। কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.