তিরিশ বছরে সিলেটের আঞ্জুমানে তালিমুল কোরআন by জহির উদ্দিন বাবর

ঞ্জুমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরামনে করেন, নিয়তের বিশুদ্ধতা ও উদ্দেশ্যের সাধুতাই প্রতিষ্ঠানটির তিন দশকের
সাফল্যের চাবিকাঠি রাসূল (সা.) বলেছেন, যিনি কোরআন শেখেন এবং শেখান তিনি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। ইবাদতের মধ্যেও কোরআন তেলাওয়াতকে সর্বোত্তম ইবাদত বলা হয়েছে। কোরআন এমন এক কষ্টিপাথর, এর স্পর্শে যারাই যায় তারাই খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। যে প্রতিষ্ঠানে শুধুই কোরআনের খেদমত করা হয় সে প্রতিষ্ঠানও


নিঃসন্দেহে উত্তম। সিলেটের আঞ্জুমানে তালিমুল কোরআনও সে ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান। ত্রিশ বছর ধরে কোরআনকেন্দ্রিক নানা খেদমত আনজাম দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। তিন দশক পূর্তির এই শুভক্ষণে প্রতিষ্ঠানটি ৬ ও ৭ অক্টোবর দু'দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। দেশ-বিদেশের অগণিত কোরআনপ্রেমিক যোগ দিচ্ছেন এই সম্মেলনে।
আঞ্জুমানে তালিমুল কোরআনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮২ সালের ১০ মার্চ। এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। মুসলিম নর-নারীকে কোরআনের বিশুদ্ধ জ্ঞানদান এবং আদর্শ সমাজ গঠনের কারিগর বানানোই এর একমাত্র লক্ষ্য। সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি সামনে নিয়ে অত্যন্ত পরিশীলিতভাবে এগিয়ে চলেছে এ প্রতিষ্ঠানের বহুমুখী কার্যক্রম। বর্তমানে সিলেট মহানগরীর গোটাটিকরে আঞ্জুমান কমপেল্গক্সে সুপরিসর জায়গায় এর কার্যক্রম চলছে। দেশের ২৫ জেলায় এর ছয় শতাধিক উপকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে অংশগ্রহণ করে এ বছর প্রায় ৯০ হাজার ছাত্রছাত্রী পবিত্র কোরআনের সহিহ তালিম নিচ্ছে।
এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় রয়েছে ইলমুল কিরাতের স্বতন্ত্র মাদ্রাসা, যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা তৈরির ব্যবস্থা, মসজিদকেন্দ্রিক কোরআন শিক্ষা ও তাফসির মাহফিল। এ ছাড়া অনিয়মিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিশেষ কেরাত প্রশিক্ষণ। শুধু বাংলাদেশ নয়, আঞ্জুমানের অধীনে ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু জায়গায় এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বয়স্ক ও যুবকদের কোরআন শেখানোর ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা অপরিসীম। 'ফুরকানিয়া মক্তব অ্যাসোসিয়েশন' গঠন করে আঞ্জুমান দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু-কিশোরদের মধ্যে কোরআনে জ্ঞান বিতরণ করে যাচ্ছে। আঞ্জুমানের রয়েছে নিজস্ব প্রকাশনা ও পাঠাগার বিভাগ। কোরআন শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে সাময়িকী, পোস্টার, লিফলেট, ক্যালেন্ডারসহ শিক্ষাসামগ্রী প্রকাশ করা হয়। এ পর্যন্ত আঞ্জুমান থেকে তাজবিদ বিষয়ে ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। দাওয়াতুল কোরআন নামে এর একটি মাসিক প্রকাশনাও রয়েছে।
খেদমতে খালক বা মানবসেবা আঞ্জুমানের একটি বড় কর্মসূচি। 'আঞ্জুমানে সিবগাতুল্লাহ' নামের একটি সংগঠন রয়েছে। এর মাধ্যমে গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও আঞ্জুমানের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। আলেম সমাজের ঐক্য প্রচেষ্টায়ও আঞ্জুমান কাজ করে যাচ্ছে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধ নিরসনে আঞ্জুমানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
আঞ্জুমানে তালিমুল কোরআন যখন যাত্রা করে তখন এর শাখা ছিল মাত্র একটি। বর্তমানে এর শাখার সংখ্যা ছয় শতাধিক। কোরআনকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ আসনটি এখন আঞ্জুমানের। এটি এখন একটি বিস্তৃত শিক্ষা বোর্ডের রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর হাজার হাজার দক্ষ কারি তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। যারা দেশ-বিদেশে সহিহ কোরআনে তালিমদানে রত আছেন। এর রয়েছে নির্দিষ্ট একটি সিলেবাস ও কারিকুলাম। প্রতিবছর একযোগে সারাদেশের শাখাগুলোতে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কেরাত ফাইনাল পরীক্ষায় আঞ্জুমানের ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে বরাবরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে।
আঞ্জুমানে তালিমুল কোরআনকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কারি আলী আকবর সিদ্দিকের। যুগসচেতন প্রাজ্ঞ এই আলেম আমাদের অবহেলিত সমাজকে কোরআনের আলোয় আলোকিত করার মহান মিশন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করেন। সাফল্যের প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করতে তাকে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর ওপর আস্থাশীল এই বুজুর্গ আলেম সব বাধা উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠানটিকে সাফল্যের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। আঞ্জুমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নিয়তের বিশুদ্ধতা ও উদ্দেশ্যের সাধুতাই প্রতিষ্ঠানটির তিন দশকের সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রতিষ্ঠানটির জন্য আমাদেরও শুভকামনা রইল।
zahirbabor@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.