শুভ বিজয়া-জয়ী হোক সত্য ও সুন্দর

জ বিজয়া দশমী। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন আজ। গজে চড়ে যে দেবীর আগমন ঘটেছিল মর্ত্যে, আজ তিনি বিদায় নেবেন দোলায়। দুর্গতিনাশিনী হিসেবে সম্মানীয়া এই দেবী বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে দুর্গা। পরম পূজনীয় তিনি। তিনিই আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা ও সিংহবাহনা। মানবের কল্যাণে এবং অশুভর ওপর শুভর বিজয়কে তিনি নিশ্চিত করেন।


অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছিল অন্যায় ও অশুভ শক্তির পরাজয়, ন্যায় ও শুভশক্তির জয়। তিনি মানুষকে মহৎ হতে প্রাণিত করেন। মানুষের মনের দৈন্য ও কলুষ দূর করেন। তাই শুভ ও অশুভর মধ্যকার দ্বন্দ্বে শুভশক্তির বিজয়ের তাৎপর্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সর্বজনীন।
পুরাণে আছে, রামচন্দ্র রাবণ বধ করার জন্য অকালে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। আমাদের বাংলাদেশে এ পূজার প্রচলন হয় হাজার বছরেরও আগে। বাঙালির সাংস্কৃতিক মিলনসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ পূজা দেশাত্মবোধও জাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শারদীয় উৎসব।
অন্যায়, অশুভ ও অসত্যের বিরুদ্ধে ন্যায়, শুভ ও সত্যের চূড়ান্ত বিজয় ঘটে_এই হলো সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের, সব ধর্মের মূলকথা। মানুষের পরম লক্ষ্য আত্মিক শুচিতা অর্জন এবং তা রক্ষা করে চলা। কিন্তু মানুষ সে লক্ষ্যে সব সময় অবিচল থাকতে পারে না। কখনো কখনো মানুষ পথের দিশা হারায়। হয়ে ওঠে নির্মম, কখনো বা নৃশংস। পৌরাণিক মহিষাসুর সেই নির্মমতা ও নৃশংসতারই প্রতীক। মানুষকে পতন ও ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায় মানুষের মনের ভেতরে থাকা মহিষাসুর। মানুষকে সেই পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে আবির্ভূত হন দেবী দুর্গা। তিনি মানুষকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে দেন। খণ্ডাংশ থেকে সমগ্রর দিকে, অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে, বিচ্ছিন্নতা থেকে মিলনের দিকে, বিরোধ থেকে ঐক্যের দিকে মানুষের যে চিরন্তন যাত্রা; এই যাত্রাপথে দেবী দুর্গা মানুষের চিরন্তন দিশারি। দুর্গতিনাশিনী হিসেবে সম্মানীয়া আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা ইত্যাদি নামে অভিহিত দেবী দুর্গা মানবের কল্যাণে এবং অশুভর ওপর শুভর বিজয়কে নিশ্চিত করেন।
বাঙালির সাংস্কৃতিক মিলনসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শারদীয় দুর্গোৎসব। বিশেষ করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার উৎকৃষ্ট উদাহরণ দুর্গোৎসব। ষষ্ঠীপূজার দিন থেকেই দেশজুড়ে যে উৎসব এবং সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির আমেজ শুরু হয়েছিল, পরের দিনগুলোতেও সেই পরিবেশ ও আবহ বজায় থেকেছে। আজ বিজয়া দশমীর দিন পর্যন্ত সারা দেশ ছিল উৎসবমুখর। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ২৮ হাজার মন্দির প্রাঙ্গণ ছিল উৎসবে মুখর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভক্ত নারী-শিশুসহ সব বয়সের মানুষের নির্বিঘ্ন ও নিঃশঙ্ক আনাগোনায় মুখর ছিল দেশের পূজামণ্ডপগুলো।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষে-মানুষে সব ভেদাভেদ ও সংকীর্ণতা চিরতরে দূর হয়ে যাক। শক্তিশালী হোক মিলন ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ধারা। বিজয়া দশমীতে সত্য, ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হোক_বিজয়া দশমীতে এটাই আমাদের কামনা। সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা। শুভ বিজয়া।

No comments

Powered by Blogger.