চরাচর-বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

নেক প্রতীক্ষা আর অনেক আন্দোলন শেষে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর রংপুর বিভাগের একমাত্র সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় 'রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকেই রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রংপুরবাসী তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় ছিল। রংপুরবাসীর অপেক্ষার একটি প্রমাণ পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম


লুৎফর রহমানকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার দিন। দেশের আর কোনো উপাচার্য দায়িত্ব পাওয়ার পর এত বিপুল পরিমাণ ফুলেল শুভেচ্ছা বোধ করি পাননি। সেদিন তিনি যত ফুল পেয়েছিলেন, সেই ফুলের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেষ হওয়ার অনতিবিলম্বে অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমানকে উপাচার্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করার মতো এমন কোনো কারণও ছিল না। বরং প্রায় অর্ধশত বছরের উত্তরাঞ্চলের বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনে বর্তমান সরকার রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের নামে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পারত। প্রথম উপাচার্যের পর উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. মু. আবদুল জলিল মিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিরলসভাবে তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তারে এবং গবেষণার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। বর্তমান মহাজোট সরকারের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি যত্ন নেওয়ার চেষ্টাটা সাধুবাদ পাওয়ার মতো। বাংলাদেশে নতুন যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে, তার মধ্যে দ্রুত বিকাশমান হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করার মতো। বর্তমানে ছয়টি অনুষদে নতুন পাঁচটি বিভাগসহ মোট ২০টি বিভাগ রয়েছে। অতি অল্প সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, তাতে ৩০টি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়েছে। নতুন শিক্ষাবর্ষে পাঁচটির পরিবর্তে ১০টি বিভাগের অনুমোদন পেলে ভালো হতো। রংপুর বিভাগে বিশাল এক জনগোষ্ঠীর জন্য গড়ে ওঠা সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায়। উত্তরাঞ্চলবাসীর জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বটে। গত বছরও ৮৯০টি আসনের জন্য প্রায় ২৬ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। বর্তমানে যত শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী পাস করে, তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি ব্যবস্থা এতটাই সীমিত যে বাধ্য হয়ে প্রচুর শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার পাঠ নিতে হয়। এতে দেশের অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারকে কষ্ট করে সন্তানকে লেখাপড়া করাতে হয় এবং নিম্নবিত্তদের পক্ষে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। একদল উদ্যমী শিক্ষক নিজেদের মেধা, সময় ও শ্রম_সব কিছু নিবেদন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কাজে। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার নামে একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেছে। এ বছর থেকে এ ইনস্টিটিউটের অধীনে এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে গবেষক ভর্তি করানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিশেষ তত্ত্বাবধানে এখানকার গবেষণাকাজে সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনের নিমিত্তে শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি হল নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির পর যখন হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওঠানো হবে, তখন শিক্ষার্থীসংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আছে প্রায় ৮০০ আসনের তিনটি হল। শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। এর মধ্যে দুটি ছাত্র ও একটি ছাত্রীদের জন্য। তিনটি হলের দুটির নামকরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট হলটির নাম হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্যের নামে। রংপুর শহরে শিক্ষকতার বাইরে অন্য কাজের সুযোগ কম হওয়ায় অনেক যোগ্য এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক এখানে শিক্ষকতা করতে আসতে চান না। শিক্ষকদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা প্রয়োজন। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্যও আবাসিক ব্যবস্থা দ্রুত গড়ে তোলা প্রয়োজন। শিক্ষা বিস্তারে উত্তরাঞ্চলসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অশেষ অবদান রাখবে_এই আমাদের প্রত্যাশা।
ড. তুহিন ওয়াদুদ

No comments

Powered by Blogger.