একটি সঠিক সিদ্ধান্ত-সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক নিয়ম

বশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সৃষ্ট জটিলতার অবসান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের অনুদান নিয়ে যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল, সে অবস্থার অবসান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি অনুদান অব্যাহত থাকবে। শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকারি অনুদান অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর


শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। দেশের অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও একটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালে যে আইনে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়, সেই আইনের ফাঁকে এখন পড়ে যায় এই বিশ্ববিদ্যালয় ও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। যে আইনে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়, সেই আইনটি হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫। এই আইনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন-ব্যয় ও ছাত্র বেতনাদি-সংক্রান্ত ২৭(৪) ধারায় বলা আছে, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হইবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌনঃপুনিক ব্যয় জোগানে সরকার কর্তৃক প্রদেয় অর্থ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাইবে এবং পঞ্চম বছর হইতে উক্ত ব্যয়ের শতভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ও উৎস হইতে বহন করিতে হইবে।' ধারা ২৭(১)-এ বলা আছে, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক পরিচালন-ব্যয়ের (মূলধন ব্যয় ব্যতিরেকে) নিরিখে প্রতিবছর ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়যোগ্য বেতন ও ফিস নির্ধারিত হবে।' ধারা ২৭(২)-এ বলা আছে, 'সেমিস্টার অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন ও ফিস সেমিস্টার শুরু হওয়ার আগেই পরিশোধ করতে হবে।' ধারা ২৭(৩)-এ বলা আছে, 'বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে প্রণীত প্রকল্পব্যয়ের অনূ্যন ১৬ শতাংশ অর্থ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে এবং অবশিষ্ট অর্থ সরকার কর্তৃক প্রদেয় হবে।' এ ছাড়া ধারা ২৭(৫)-এ বলা আছে, 'সরকার বা অন্যান্য বৈধ উৎস থেকে প্রাপ্ত অনুদান বা আয় থেকে প্রয়োজনের নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি বা ক্ষেত্রমতে উপবৃত্তি প্রদান করতে পারবে।' ছাত্ররা এই আইনের বিরোধিতা করে রাস্তায় নামে। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ছাত্রদের এই আন্দোলনের শুরুতেই শিক্ষামন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। এর একটি সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তার পরও একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এই আন্দোলন থেকে সুবিধা আদায় করতে চেয়েছিল। ভেতরে ভেতরে এই সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর একটি উসকানিও যে ছিল, সেটাও ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অশান্ত হয়ে ওঠা থেকে অনুধাবন করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছিল। অন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েও এই জটিলতা দেখা দিতে পারত। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের পর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিষয়ে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো এখনো দখলমুক্ত করা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো দখলমুক্ত করা গেলে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যার সমাধান করা যেত।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব এক নিয়মে চলুক। প্রয়োজনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বদল করা হোক। কিন্তু দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এক নিয়মে চলা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.