অনিশ্চিত পদ্মা সেতু-সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে

বশেষে আরো একটি হতাশার খবর। আরো একটি স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা। যে স্বপ্নের সেতুটির জন্য দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা, আপাতত সেটি হচ্ছে না। দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছে। এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। আশঙ্কাটিই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য এখন সরকারকে বিকল্প ভাবতে হবে।


দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। দীর্ঘ চার দশকেও এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বিগত সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একনেকে পাস হয় পদ্মা সেতু প্রকল্প। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে_এমনটিই আশা করা গিয়েছিল। গত মার্চেই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। যমুনা সেতু নির্মাণের পর যেমন দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন ঘটে, একইভাবে আশা করা গিয়েছিল, পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গেও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। খুলে যাবে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত। বাস্তবায়িত হবে ট্রান্স-এশিয়ান রুট। মংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিতে পদ্মা সেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে, এমনটিও আশা করা গিয়েছিল। মহাজোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প হিসেবেই নেওয়া হয়েছিল পদ্মা সেতু প্রকল্প। কিন্তু তহবিল সংগ্রহের নানা জটিলতায় বারবার কাজ পিছিয়ে গেছে। ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ের পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার সাহায্য দেবে, এমন কথা ছিল। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) দেবে ৭৫ কোটি ডলার। বাকি অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এখন ঋণ সহায়তা স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। দুর্নীতির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাতা সংস্থাটি তাদের অর্থ ছাড় করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। আবার দুর্নীতির তদন্ত কবে নাগাদ শেষ হবে, এ সম্পর্কেও খোলাসা করে কিছু বলা হয়নি। কথা ছিল, ২০১৩ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু সাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বিশ্বব্যাংক তহবিল স্থগিত করায় যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, তাতে বর্তমান সরকারের আমলে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তার তহবিল আপাতত স্থগিত করায় প্রকল্পটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ বিশ্বব্যাংক ছিল এই প্রকল্পের অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ক। স্বাভাবিকভাবেই আটকে যেতে পারে এডিবি, জাইকা, আইডিবির ঋণ সহায়তা। আবার যেহেতু বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়ে গেছে, কাজেই বিকল্প কোনো ব্যবস্থা খোঁজার সুযোগও বোধ হয় সরকারের হাতে থাকছে না। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন না হলে সরকারের অঙ্গীকার পূরণ হবে না। তার চেয়েও বড় কথা, সরকারের হাতে কোনো বিকল্প নেই। এ সংকট থেকে মুক্তির একটিই পথ_তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করা। যেসব অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে, সেই তদন্তকাজে সরকারকেই উদ্যোগী হয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যে অভিযোগে এই সংকটের সৃষ্টি, সেই সংকট থেকে মুক্তির পথ সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। আমরা আশা করব, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সৃষ্ট সব ধরনের জটিলতা স্বল্প সময়েই মিটে যাবে এবং পদ্মা সেতু নির্মাণে সৃষ্ট অচলাবস্থার দ্রুত নিরসন ঘটবে।

No comments

Powered by Blogger.