সার সংকট-কৃষি ও কৃষকদের কথা আমলে নিন

কৃষিনির্ভর এ দেশে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কিংবা বৃদ্ধিকল্পে সারের দাবিতে পুলিশের গুলিতে কৃষকের প্রাণ হারানোর মর্মন্তুদ ঘটনা দূর-অতীতের বিষয় নয়। চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে সার নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল যে তুঘলকি কাণ্ড শুরু করেছিল, এরই প্রতিবাদ করতে গিয়ে সারপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানানোর কারণে গুলি ছোড়া হয়েছিল কৃষকদের লক্ষ করে। যে দেশের অর্থনীতির চাকা অনেকাংশেই সচল রেখেছে কৃষি ও কৃষক, সে


দেশে কৃষকের অন্তহীন ভোগান্তির বিষয়টি বড়ই বিস্ময়কর। ৯ অক্টোবর কালের কণ্ঠের দুটি ভিন্ন প্রতিবেদনে বরগুনা ও কলাপাড়ার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা এ সরকারের আমলে কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না।
বরগুনায় হাজার টাকার (প্রতি বস্তা) সার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকায়। সার, কীটনাশক, সেচসহ অন্য খরচ মিলিয়ে প্রতি বিঘায় কৃষকের যে খরচ হয়, এর বিপরীতে কত টাকার ধান উৎপাদন সম্ভব? বরগুনায় সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অসাধু সার ব্যবসায়ীরা নিজেদের পকেট স্ফীত করছেন। অন্যদিকে কলাপাড়ায় সারের দেখাই মিলছে না। কৃষকরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে মিছিল করে সারপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন। এখনো বোরো মৌসুম পুরোপুরি শুরুই হয়নি। সরকারের তরফে বলা হয়েছে, সারের কোনো সংকট নেই; কিন্তু মাঠ পর্যায়ের চিত্র ভিন্ন। একদিকে সারের সংকট (বিশেষ করে ইউরিয়া) অন্যদিকে ভেজাল সার_এই দুই কারণে কৃষকের অবস্থা নাকাল। বরগুনা কিংবা কলাপাড়ার চিত্রটি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এবার এখনই যে আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে আশঙ্কা হচ্ছে, ভর মৌসুমে এ সংকট আরো প্রকট হবে। সার বিতরণ, বিক্রিসহ অন্য ক্ষেত্রেও নানা গলদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারী অসাধু সার ব্যবসায়ীদের রয়েছে নিজেদের উদরপূর্তির লক্ষ্যে নানা রকম কারসাজি। এই অপক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।
কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার পথে পথে এখনো কাঁটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের জন্য সামগ্রিকভাবে নিশ্চয়ই এটি প্রীতিকর সংবাদ নয়। উৎপাদন খরচ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি। এর মধ্যে যদি অসাধু সার ব্যবসায়ীরা কৃষকের গলায় আবার রশি লাগানোর অপচেষ্টা করে, তাহলে পরিস্থিতি নাজুক হতে বাধ্য এবং কোনোভাবেই তা মঙ্গলজনক হবে না। সার বিতরণ, বণ্টন, বিক্রিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং একই সঙ্গে চাহিদা মোতাবেক সারপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কীটনাশকসহ উৎপাদন সহায়ক প্রয়োজনীয় সব কিছু সহজলভ্যও করতে হবে। কেউ যাতে কৃষকদের হয়রানি করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রশাসনিক নজরদারি কঠোর করা চাই। কৃষি উৎপাদনের পথ মসৃণ করতে না পারলে শুধু কৃষকই মরবে না, দেশের অর্থনীতিও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব বিষয় সরকারের নীতিনির্ধারকরা আমলে রাখলেই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.