শুভ জন্মদিন-উন্নয়নের বরপুত্র এম সাইফুর রহমান

ধুনিক অর্থনীতির রূপকার এম সাইফুর রহমান বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক মৌলভীবাজার জেলার বাহার মর্দান গ্রামে ১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ আবুল বাছির, মা তালেবুন নেছা। সাইফুর রহমান ছিলেন তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুর রহমান দলীয় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও মাতৃভাষা রক্ষার প্রতিটি আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।


বাঙালির ঐতিহাসিক ২১ ফেব্রুয়ারিতে তিনি মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রনেতারা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিলে সাইফুর রহমান তাতে অংশগ্রহণ করেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তৎকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল, যারা মুচলেকা প্রদান করবে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। আত্মমর্যাদাবান বাঙালিপ্রেমিক ও দেশপ্রেমিক সাইফুর রহমান বিশ্বাস করতেন, ভাষা আন্দোলন বাঙালির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের আন্দোলন। এই সংগ্রাম বাঙালির দাবি আদায়ের সংগ্রাম। তিনি তখন তৎকালীন সরকারের কাছে নতি স্বীকার করেননি। অনেকে তখন মুচলেকা দিয়ে কারামুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সাইফুর রহমান সরকারকে মুচলেকা দিতে অস্বীকার করেন। পরে তিনি স্বাভাবিক নিয়মে জেল থেকে মুক্তি পান। ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০০৫ সালে তিনি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একুশে পদক লাভ করেন।
সাইফুর রহমান ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান, কিন্তু লন্ডনে পেঁৗছার পর তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৩-৫৮ সালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষ শিক্ষা অর্জন করেন। সাইফুর রহমান দেশে ফিরে এসে পাকিস্তান অঙ্েিজন কম্পানিতে যোগদান করেন। মাত্র দুই বছর চাকরি করার পর তিনি এবং তাঁর দুই বন্ধু মিলে রহমান অ্যান্ড রহমান হক নামে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্ম গড়ে তোলেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে সাইফুর রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন। পরে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে মৌলভীবাজার সংসদীয়-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনে সাইফুর রহমানের ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হলে সাইফুর রহমান ওই বছরের ২০ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আবার মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ এবং সিলেট-১ (সদর-কোম্পানীগঞ্জ-১) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পর সাইফুর রহমান অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি জাতীয় সংসদে ১২ বার বাজেট পেশ করে কৃতিত্বপূর্ণ রেকর্ডের অধিকারী হন।
তিনি একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং এই দুই প্রতিষ্ঠানের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত মাদ্রিদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। জননন্দিত নেতা সাইফুর রহমান বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ইস্যু নিয়ে অসংখ্য অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাইফুর রহমান দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছেন।
আজ ৬ অক্টোবর বিশ্ব অর্থনীতির বরপুত্র সাইফুর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী। হ্যাপি বার্থডে টু সাইফুর রহমান।
সালেহ আহমদ হোসাইন

No comments

Powered by Blogger.