স্মরণ-চে গুয়েভারা : বিপ্লবের অনুপ্রেরণা

কাপুরুষ, মারো, গুলি মারো, তোমাদের গুলিতে মরবে শুধু মানুষটি।' মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এমন উক্তি উচ্চারণের সাহস খুব কম মানুষেরই হয়। সেই বিরল মানুষের একজন আরনেস্তো চে গুয়েভারা। বিশ্বজুড়ে যাঁর নাম হয়ে উঠেছে বিপ্লবের প্রতিশব্দ। আজ ৯ অক্টোবর বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা অগণন মানুষ বিশেষ করে তরুণদের অনুপ্রেরণা চে গুয়েভারার ৪৪তম মৃত্যুদিবস। ১৯২৮ সালে আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণকারী এই বিপ্লবীকে ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর বলিভিয়ার


জঙ্গলে গুলি করে হত্যা করে সরকারি বাহিনী। কারণ চে যে দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা কায়েমি স্বার্থবাদীদের পছন্দ ছিল না। বলিভিয়া সরকার আর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা চের বিচার না করে তাঁকে বন্দি অবস্থায়ই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। চে ভাজারি পড়েছিলেন। ছাত্রাবস্থায়ই পুরো লাতিন আমেরিকা ঘুরে বেড়াতে গিয়ে তাঁর অন্তরের চোখে ধরা পড়েছিল ঘুণেধরা রাষ্ট্রব্যবস্থার গভীর অসুখটি_যা দেশে দেশে বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষকে তিলে তিলে পিষে মারছিল। সেই থেকে ব্যক্তির শরীরের বদলে গোটা সমাজ আর রাষ্ট্রের রোগ সারানোই হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর আরাধ্য। কিউবার বিপ্লবে সহায়তার পর চে পাড়ি জমান বলিভিয়ায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানেই তাঁর সংক্ষিপ্ত কিন্তু অসম্ভব সফল জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। চে গুয়েভারা অসীম সাহসী ও দূরদর্শী ছিলেন বলেই সফলতা এত অল্পসময়ে তাঁর জীবন স্পর্শ করেছিল। যে সমাজতন্ত্র চে চেয়েছিলেন কিংবা সমর্থন করেছিলেন, বিশ্বের বুক থেকে সেটা অনেকটা মলিন হয়ে গেছে বটে; কিন্তু এখনো মানুষের কল্যাণে তা-ই শ্রেষ্ঠ। গণতন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন মৌলবাদ। এটি দুঃসংবাদ ছাড়া আর কিছু নয়। এই দুঃসময়ে চে গুয়েভারার কথা আমাদের স্মরণে আসে আরো বেশি করে। আজ নানা আয়োজনের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও তাঁর মৃত্যুদিবস পালিত হবে গভীর শ্রদ্ধাভরে। কিংবদন্তি হয়ে ওঠা বিপ্লবী নেতা চে গুয়েভারার স্মরণে নানা রকম অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করা হবে। শোষিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে আরেকটি বিপ্লবের সূচনার জন্য ১৯৬৬ সালে বলিভিয়ার সেনারা তাঁকে আটক করে। এক দিন পর তাঁকে হত্যা করা হয়। শারীরিকভাবে চে-কে সরিয়ে দেওয়া হলেও তাঁর স্থান এখনো অসংখ্য মানুষের হৃৎপিণ্ডে। দেশ-কালের সীমানা ভেঙে অন্যায়-নিপীড়ন আর শোষণবিরোধী সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর ছবি এখনো শোভা পায় চারদিকে। চে গুয়েভারার হাসিমাখা মুখ এখন পর্যন্ত বিশ্বের জনপ্রিয়তম ছবি। চে গুয়েভারাকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় যত শোকগাথা রচিত হয়েছে, তা সত্যি বিরল। চিলির বিপ্লবী কবি পাবলো নেরুদার স্মৃতিকথায় সেই চেকেই আমরা দেখি বিষণ্ন এক যোদ্ধার প্রতিকৃতিতে, যিনি ভালোবাসতেন কবিতা। তাঁর অস্ত্রের পাশেই ছিল কবিতা। গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করি।
বনরূপা

No comments

Powered by Blogger.