রাজস্ব ফাঁকির কৌশল-বন্ধ করতে হবে সব ফাঁকফোকর

রাজস্ব ফাঁকির একটি পথ অন্তত ধরতে পেরেছে চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাজ করে আসছে। অতি সম্প্রতি দুই শতাধিক চালান ধরা পড়েছে। আমদানিকারকরা সরকারের ট্রুথ কমিশনের কাছে দোষ স্বীকার করার পর তাদের নূ্যনতম জরিমানা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। এখানে আমদানি করা হয় না এমন পণ্য বোধহয় নেই। এসব পণ্য আমদানির সময়


এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করে থাকে। সবার কাছেই এটা অনেকটা 'ওপেন সিক্রেট'। এর সঙ্গে কাস্টমস ও বন্দরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জড়িত। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এভাবে পণ্য আমদানি করলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় দেশ। প্রতিবছর এভাবে দেশ যে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়, তার পরিমাণ একেবারে কম নয়। এভাবে দেশকে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা শুধু যে অসাধুতা, তা নয়। এটা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একটি বড় চক্র এই অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। অসাধু ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কাস্টমস, বন্দরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে সিলিকন স্টিলের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি করা হচ্ছিল হাজার হাজার টন জিপি-বিপি-কালার শিট ও হট রোলড কয়েল। সিলিকন স্টিলের ডিউটি মাত্র ৫ শতাংশ। অন্যদিকে জিপি শিট ও বিপি শিটের ডিউটি ১২ শতাংশ এবং কালার শিটের ডিউটি ২০ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে এসব পণ্য সিলিকন স্টিল হিসেবে ঘোষণা দিলে বিপুল পরিমাণ ডিউটি কম দেওয়া যায়। এভাবেই দিনের পর দিন ফাঁকি দেওয়া হচ্ছিল কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। চট্টগ্রাম বন্দরে যে ঘটনাটি ধরা পড়েছে, এর পেছনে অনেক রাঘববোয়াল জড়িত থাকতে পারে, এমন সন্দেহ অমূলক নয়। একটি ঘটনা যখন ধরা পড়েছে, তখন এমন ঘটনা যে আরো আছে, এটাও তো স্বাভাবিক। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে অনেক ঘটনা ধামাচাপা পড়া বা একের পর এক ঘটে যাওয়াটাও বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য অস্বাভাবিক নয়।
চট্টগ্রামের কাস্টম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্বীকার করেছে। স্বীকার করেছে ব্যবসায়ীদের এ ধরনের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতার কথাও। এবার ২০০ চালান যেমন আটক করা হয়েছে, তেমনি গত বছরও আটক করা হয়েছিল ৬০টি চালান। কিন্তু চালান আটকের পরও গত বছরের তুলনায় এ বছর একই ধরনের ঘটনা বেড়েছে। এতে ধারণা করা যায়, অপরাধীচক্র সক্রিয় ও বেপরোয়া। চক্রটি যে যথেষ্ট শক্তিশালী, সেটা বলাই বাহুল্য।
এ অসাধুচক্র ভাঙতে হবে। দেশের স্বার্থেই এ চক্রের পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরা উচিত। এ চক্র দেশের যে পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, তা তাদের কাছ থেকেই আদায় করা উচিত। নামমাত্র জরিমানা আদায় না করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জরিমানা আদায় করা উচিত। রাজস্ব ফাঁকির দণ্ড আরো কঠোর করা দরকার।


No comments

Powered by Blogger.