রোহিঙ্গা সমস্যা-দ্রুত সমাধান প্রয়োজন

মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের মিয়ানমার সফরের মধ্য দিয়ে সেই ভাবমূর্তি সম্ভবত একটি নতুন দিকনির্দেশনা পেতে যাচ্ছে। মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেত্রী অং সান সু চি এখন মুক্ত এবং দেশের রাজনীতিতে তিনি অনেকটা সরব ভূমিকা পালন করছেন। পশ্চিমা সাংবাদিকদের সঙ্গেও তিনি কথা বলছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার


সফর করেছেন। ইতিপূর্বে মন্ত্রীপর্যায়ে একাধিক সফর বিনিময় হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেইদেশেরপররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে উভয় দেশ বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের এই সমস্যাটির সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দুটি প্রধান সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। এর একটি হচ্ছে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত। এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ইতিমধ্যেই শুনানি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ২০১২ সালের মধ্যেই আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাওয়া যাবে। এবং একই সঙ্গে আমরা আশা করছি, দুটি দেশই সেই রায় মেনে নেবে। এখন দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্যাটি আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবিত করছে, তা হলো রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা। বাংলাদেশে গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা প্রবেশ করছে। ইতিপূর্বে কিছুসংখ্যক শরণার্থী ফিরিয়ে নেওয়া হলেও বাংলাদেশে এখনো রেজিস্টার্ড ও আনরেজিস্টার্ড মিলিয়ে প্রায় চার লাখ শরণার্থী রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। বাংলাদেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। প্রায়ই খাদ্য সংকট প্রবল রূপ ধারণ করে। সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষে চার লাখ বাড়তি মানুষের অন্ন সংস্থান 'গোদের উপর বিষফোড়া'র মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রধান চাপটি পড়ছে মূলত কঙ্বাজার জেলার ওপর। তারপর সেই চাপ পড়ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ওপর। এমনকি বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ওপরও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে এবং তা বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রকাশিত বিভিন্ন খবর থেকে জানা যায়, কঙ্বাজার জেলায় সামাজিক শৃঙ্খলা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে রীতিমতো ধস নেমেছে। সেখানকার স্থানীয় অর্থনীতিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে টেকনাফ গেইম রিজার্ভসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। দিনমজুর শ্রেণীর স্থানীয় লোকজন কঙ্বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ দেশের অন্যত্র যখন দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার বেশি, তখন সেখানে দৈনিক মজুরি ১০০ টাকারও কম। ফলে রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের মধ্যে বৈরী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে এবং ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা-বাঙালি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই তা আরো ভয়াবহ রূপ নেবে।
মিয়ানমার আমাদের সীমান্তবর্তী দেশ। কাজেই প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্কোন্নয়নের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে তা আরো এগিয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.