মমতাময়ী মালকোহা by সারোয়ার সুমন

কটকে লাল রঙের ওপর বসানো বাদামি রঙের চোখ। আর চোখ ছুঁয়ে থাকা ঠোঁটে আছে সবুজ রঙ। লেজও চোখে পড়ার মতো লম্বা। বিশেষ এ তিনটি বৈশিষ্ট্যই বিশেষত্ব দিয়েছে ছোট্ট পাখি মালকোহাকে। নির্জন পরিবেশই পছন্দ ওদের। তবে সন্তানের জন্য নিজের এ পছন্দকে নিমেষেই ত্যাগ করে তারা। তাই মালকোহাকে কেউ কেউ চেনে 'মমতাময়ী' নামে। বর্ণিল এ পাখিটি দৈর্ঘ্যে সাধারণত ৫০ থেকে ৫২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে লেজের
দৈর্ঘ্যই ৩৮ সেন্টিমিটারের বেশি। ১১০ থেকে ১২০ গ্রাম ওজনের এ পাখির পিঠে থাকে ধূসর সবুজ রঙ। আর বুক ও পেটের নিচের রঙ পীতাভ ধূসর। কালচে তেল-সবুজ রঙের ডানার দৈর্ঘ্য সাধারণত ১৭ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার। ওড়ার সময় চোখে পড়ে ডানার রঙ। মালকোহার লম্বা লেজেও আছে দুটি রঙ। এর একটি সবুজ, আরেকটি কালো। তবে সব রঙ ছাড়িয়ে মালকোহাকে ঔজ্জ্বল্য দিয়েছে চোখের পাশের টকটকে লাল ও ঠোঁটের সবুজ রঙ। মালকোহার বিশেষত্ব প্রসঙ্গে বিশিষ্ট গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী এসএম আসমত বলেন, 'মালকোহার দেহের চেয়ে লেজের দৈর্ঘ্য বেশি। এদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গে থাকে হরেক রঙের সমাহার। চোখের চারপাশে থাকা টকটকে লাল ও সবুজ রঙের ঠোঁটের কারণে সবার নজর কাড়ে এ পাখি।'
প্রাপ্তবয়স্কদের চামড়া উজ্জ্বল বাদামি হলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক মালকোহার রঙ অনুজ্জ্বল আর চামড়া কিছুটা কালচে বাদামি। আবার ভালো করে খেয়াল করলে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ঠোঁটেও পাওয়া যাবে দুটি রঙ। ঠোঁটের এক অংশে সবুজ থাকলেও অপর অংশে হালকাভাবে থাকে কালো রঙ। তবে ছেলে ও মেয়ে মালকোহা দেখতে প্রায় একই রকম। বাংলাদেশে সচরাচর ছয় প্রজাতির মালকোহা দেখা যায়। পাহাড়ঘেরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বনাঞ্চলে বিচরণ করে মালকোহা। আর বিদেশে তাদের পছন্দ নেপাল, ভুটান, চীন, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিবেশ।
স্বাভাবিকভাবে মালকোহা একা থাকতে পছন্দ করে। তবে প্রজননকালে পুরুষ-নারী উভয়ে একত্রে বসবাস করে। সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবেই বিশেষ এ সময়ে সমঝোতা করে চলে এরা। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটা পর্যন্ত পুরুষ ও নারী মালকোহা পর্যায়ক্রমে পাহারা দেয়। একজন ডিমে তা দিলে অন্যজন পাহারা দেয়। আবার একজন পাহারা দিলে অন্যজনের দায়িত্ব থাকে খাবার সংগ্রহ করা। এভাবে পারস্পরিক সমঝোতায় সন্তানকে স্বাবলম্বী করে তোলে মালকোহা দম্পতি।
এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে যে কোনো মাসকে প্রজননের জন্য উপযুক্ত সময় মনে করে মালকোহা। এ জন্য এ সময় ঝোপঝাড়ঘেরা বন-জঙ্গলে তিন থেকে সাত মিটার উঁচুতে বাসা তৈরি করে তারা। দেখতে পেয়ালার মতো এসব বাসা তৈরিতে বাঁশঝাড়ের শাখা পল্লব কিংবা ছোট ছোট পাতা ব্যবহার করে এরা। লতা, গাছের কাণ্ড ব্যবহার করে বাসাকে শক্ত করে। প্রতি বছর দুই থেকে চারটি ডিম দেয় মালকোহা। ডিমগুলোর রঙ হয় চকের মতো সাদা।

No comments

Powered by Blogger.