সীমান্ত হাটে জাল নোট প্রতিরোধে যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ শুরু

সীমান্ত হাটে জাল নোট প্রতিরোধে যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে দু'দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জাল নোট শনাক্ত করার কৌশল সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে। পরে ওই কর্মকর্তারা নিজ দেশের ব্যবসায়ীসহ অন্যদের নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে। এই প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময় ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জাল টাকা ও রুপি শনাক্ত করা হবে। সম্প্রতি সীমান্ত হাটে লেনদেনের ক্ষেত্রে উভয় দেশের মুদ্রা


ব্যাপক আকারে জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণের এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, দু'দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে এবং চোরাচালান বন্ধে সীমান্ত এলাকায় হাট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২৩ জুলাই থেকে বাংলাদেশ অংশে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউয়ারগড় ও কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার বালিয়াবাড়ি এবং ভারত অংশে মেঘালয় সীমান্তের কালিয়ারচর ও কলকাতা সীমান্তে পরীক্ষামূলক-ভাবে হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এক দেশ অন্য দেশের আসল নোট না চেনার ফলে হাট চালুর কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে জাল নোটের প্রচলন দেখা দেয়। ব্যাংক থেকে মুদ্রা বিনিময় করতে গিয়ে যা ধরা পড়ে। যে কারণে এ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত হাটে নিজ নিজ দেশে প্রচলিত টাকা ও রুপির বিনিময়ে কেনাবেচা চলছে। এ দেশের ক্রেতারা টাকার বিনিময়ে ভারতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ক্রয় করেন। আর ভারতের ক্রেতারা রুপির বিনিময়ে এ দেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য কেনেন। পরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সোনালী ও জনতা ব্যাংক এবং ভারতের ব্যবসায়ীরা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ইউসিও ব্যাংক থেকে নিজ দেশের মুদ্রায় বিনিময় করে নেন।
যে কারণে ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ইউসিও ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার সাইফুল ইসলাম খান সেখানে অবস্থান করছেন। আজ তিনি আসল টাকা চেনার উপায় সম্পর্কে অবহিত করবেন। আর তিনি যাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন তারাই পরে নিজ দেশের লোকজনকে প্রয়োজন অনুসারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। উপ-মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম প্রশিক্ষণ দিতে ভারতে যাওয়ার কথা থাকলেও ভিসা না পাওয়ায় তিনি যেতে পারেননি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ অংশে সোনালী ও জনতা ব্যাংক টাকার বিনিময়ে রুপি দিয়ে থাকে। এ দুটি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আসল রুপি চেনার উপায় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবে। এ জন্য আগামী ২৪ ডিসেম্বর রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বৈদেশিক মুদ্র বিনিময় বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার কর ও কারেন্সি ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক সুমন রায় বাংলাদেশে আসবেন। এখানকার যেসব কর্মকর্তা আসল রুপির বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবে তারা পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীসহ অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দেবেন।
সূত্র জানিয়েছে, সীমান্ত হাটে সব ধরনের পণ্য শুল্কমুক্তভাবে বেচাকেনা চলছে। ২০০৫ সালে ভারত প্রথম সীমান্ত হাট চালুর প্রস্তাব দেয়। এরপর ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিল ভারতের কাছ থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্র পাওয়ার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে সীমান্তে হাট চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। কিছু দিন এ নিয়ে আলোচনা বন্ধ থাকার পর গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে ঘোষিত যৌথ ইশতেহারের ৩২ থেকে ৩৮নং অনুচ্ছেদ অনুসারে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সীমান্তে হাট বসানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। পর্যায়ক্রমে উভয় দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ে সভা শেষে পরিকল্পনা চূড়ান্ত এবং উভয় দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্নের পর গত ২৩ জুলাই থেকে এ হাটের কার্যক্রম শুরু হয়।

No comments

Powered by Blogger.