পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১০ জলদস্যু নিহত-ভোলার সাগর মোহনায় তিন ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি, এক জেলেও মারা গেছেন by রফিকুল ইসলাম ও আল-আমিন শাহরিয়ার

ভোলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় তিন ঘণ্টার এ গোলাগুলির সময় ১০ জলদস্যু নিহত হয়েছে। দস্যুদের গুলিতে মারা গেছেন এক জেলেও। কয়েক দফা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় দুই পুলিশসহ অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ভোলার মনপুরা উপজেলার সাগর মোহনা ভাসানচরের দক্ষিণে এ ঘটনা ঘটে।


পুলিশ বলেছে, জলদস্যু জাকির বাহিনী ভোলা সদরের ইলিশা থেকে এসে ভাসানচরে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি করছিল। বন্দুকযুদ্ধে চার দস্যু নিহত হয়েছে। অন্যরা মারা গেছে গণপিটুনিতে। তাদের মধ্যে বাহিনীর প্রধান জাকিরও রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, হত্যার আগে কারো কারো চোখও উপড়ে ফেলা হয়েছে।
নিহত ১১ জনের লাশ মনপুরা থানার পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ জলদস্যুদের কাছ থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
নিহত জেলের পরিচয় পাওয়া গেলেও জলদস্যুদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। ওই জেলে হলেন বিল্লাল হোসেন (২৫)। তাঁর বাড়ি ভাসানচর এলাকায়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভোলার পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, জলদস্যু নির্মূলের লক্ষ্যে পুলিশ হঠাৎ করেই মেঘনায় অভিযান চালায়। তখন পুলিশের সঙ্গে একটি জলদস্যু বাহিনীর সদস্যদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
গণপিটুনির কথা স্বীকার করে পুলিশ সুপার আরো বলেন, বন্দুকযুদ্ধের সময় গুলিবিদ্ধ জলদস্যুরা ট্রলার থেকে পালিয়ে ভাসানচরের দিকে যাচ্ছিল। তখন জেলেরা তাদের আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু ঘটনাস্থল দুর্গম হওয়ায় আহত জলদস্যুদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই আহত ১০ জলদস্যুই মারা গেছে।
আগের দিন মঙ্গলবার ভোলার সাগর মোহনার চর শাহজালালের গহিন বনে পুলিশ জলদস্যুদের অস্ত্র তৈরির আস্তানা খুঁজে পায় এবং সেখান থেকে অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
জেলেরা জানিয়েছেন, মনপুরা উপজেলার সাকুচিয়া ইউনিয়নের চরনিজাম গ্রামের মেঘনা নদীর মোহনা ভাসানচর এলাকায় গতকাল সকালে মাছ ধরতে যান বিল্লাল হোসেন। দুপুর দেড়টার দিকে একটি ট্রলারে করে জলদস্যুরা মাছ ধরা নৌকাটি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে বিল্লাল নিহত হন। অন্য জেলেরা চরনিজাম ফাঁড়ির পুলিশকে ঘটনাটি জানান।
চর নিজাম পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল ও এলাকাবাসী জানান, ১২ সদস্যের পুলিশের একটি দল স্থানীয় অর্ধশতাধিক জেলেকে সঙ্গে নিয়ে জলদস্যুদের ধাওয়া করে। এ সময় জলদস্যুরা ডাকাতি করা দুটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে পালাচ্ছিল। পুলিশ ও জেলেরা তাদের ঘেরাও করে ফেলে। এ সময় ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল প্রায় সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় চলে এ বন্দুকযুদ্ধ।
এসআই কামাল জানান, পুলিশ কমপক্ষে ৩০টি গুলি ছুড়েছে। এ সময় একটি শাটার গান, একটি পাইপগান, আটটি রামদা ও দুটি ট্রলার উদ্ধার করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁরা হলেন_এসআই নূর আলম ও পুলিশ সদস্য রেজাউল করিম।
মনপুরা থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তিনি জানান, চরের পরিস্থিতি ভয়াবহ।
রাতে পুলিশের অভিযান : অস্ত্রের আস্তানায় হানা দেওয়ার পর জলদস্যুরা যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পুলিশ ও জেলেদের ওপর প্রতিশোধ নিতে জলদস্যুরা নদীবক্ষে প্রকাশ্যে ডাকাতি শুরু করে। তারই সূত্র ধরে গতকাল ভাসানচরের এ ঘটনা ঘটে বলে মনে করছেন চরফ্যাশন থানার ওসি রিয়াজ হোসেন।
মনপুরা থানার ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বেসামাল দেখে তজুমদ্দিন ও মনপুরা থেকে আরো কয়েক প্লাটুন পুলিশ নিয়ে তিনি ভাসানচরে যান। সেখানে সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় অভিযান। আরো একটি দল নিয়ে সেখানে পেঁৗছান পুলিশ সুপার বশির আহম্মেদ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে তাঁর নেতৃত্বে নদীতে পুলিশের চিরুনি অভিযান শুরু হয়।
পুলিশ সুপার বশির আহম্মেদ জানিয়েছেন, চরের নিরীহ মানুষ ও পুলিশের ওপর জলদসুদের হামলার পর কয়েকজন ধরা পড়ে নিহত হলেও অন্যরা নদীতে এবং আশপাশের চরে অবস্থান নিয়েছে।
ভাসানচর ও চর নিজামের জেলেদের বরাত দিয়ে মনপুরার মাছ ব্যবসায়ী জুয়েল ও আমির হাওলাদার জানিয়েছেন, জলদস্যুরা বিভিন্ন চরাঞ্চলে তাণ্ডব চালাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.