বুদ্ধিজীবী দিবসে প্রধানমন্ত্রী-যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় সহায়তাকারীদেরও বিচার হবে

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় যারা সহযোগিতা করবে, তাদেরও বিচার হবে। বাংলাদেশের সচেতন মানুষ একদিন সহযোগিতাকারীদের বিচারের জন্য সোচ্চার হবেন।গতকাল বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান করে লাখো শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন না। বেইমানি করে তাদের রক্ষার চেষ্টা করলে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতার জন্য জনগণ আপনার বিচার চাইবে। আমরা মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই বিচার করে যাবে।'
জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না।'
বঙ্গবন্ধু পরিবারে কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেননি মর্মে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, 'আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম আমরা। শেখ মনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। শেখ কামাল ও শেখ জামাল মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।' তিনি বলেন, কে যুদ্ধ করেছে আর কে করেনি সে সাক্ষী দেবে ইতিহাস।
ঘটনাচক্রে জিয়া সেক্টর কমান্ডার : মেজর জিয়া একাত্তরের ২৫ মার্চ কী করেছিলেন অনেকেই জানেন না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, চট্টগ্রামে মুক্তিকামী জনতা যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ঠেকাতে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল, সেদিন জিয়া চট্টগ্রামে বহু আন্দোলনকামী, মুক্তিকামী মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছেন। যুদ্ধের সময় জিয়াকে কয়েক দফা সাসপেন্ড করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তাঁর ভুল সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেছেন। জিয়া একেবারে সম্মুখযুদ্ধে ছিলেন না। সব সময় তিন মাইল দূরে থাকতেন। ওনাকে (জিয়া) সবাই ডাকত মেজর 'রিট্রিট'। ঘটনাচক্রে তিনি সেক্টর কমান্ডার হন। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের রাজনীতি ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেন। ওই সময় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী বন্দি ছিল, অনেকের শাস্তি হয়েছিল। জিয়া তাদের মুক্ত করে দেন। সুতরাং তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মাঠে নামবেন এটাই স্বাভাবিক।"
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বিএনপি ও এরশাদের আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো দেশের স্বার্থ বিক্রি করে না, করবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সমুদ্র ও স্থলসীমা নির্ধারণ করেছে। ভারতের কাছ থেকে ১৭ হাজার একর জমি উদ্ধার করেছে। এরশাদসহ অতীতের সরকারগুলো কেন সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করেনি?
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চান না। তিনি বলেন, লজ্জা লাগে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে মানি লন্ডারিং করেছে। আজ তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মহিলা সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন। আরো বক্তব্য দেন শহীদ পরিবারের সদস্য শাহীন রেজা নূর। সভাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন নূহ-উল আলম লেনিন ও অসীম কুমার উকিল।

No comments

Powered by Blogger.