গুপ্তহত্যা আতঙ্ক-রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব সরকারের

যেকোনো হত্যাকাণ্ডই আতঙ্কের। জন্ম দেয় আশঙ্কার। আর তা যদি হয় গুপ্তহত্যা, তাহলে জনমনে আতঙ্কটা একটু বেশিই যে ছড়াবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চলতি বছরের গুপ্তহত্যার ঘটনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আতঙ্কিত দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও। হিউম্যান রাইটস ফোরাম অন ইউনিভার্সাল রিভিউ বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনেও সে আশঙ্কার কথাই উচ্চারিত হয়েছে।
দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই সংবাদ সম্মেলনে। গত কয়েক দিনে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে গুপ্তহত্যাবিষয়ক যেসব খবর এসেছে, তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করছে, প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে গিয়ে গুপ্তহত্যা ঘটানো হচ্ছে। গত কয়েক দিনে রাজধানী এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর গুম হয়ে যাওয়া এবং পরে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে নতুন করে গুপ্তহত্যার আতঙ্ক দেখা দেওয়াটা একেবারে অমূলকও নয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এ বছর ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে ২২ জন অপহরণ ও নিখোঁজ হয়েছে। এই ২২ জনের মধ্যে ১০ জনের রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। মৃতদেহ মিলেছে ১০ জনের। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, অনেককেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের মহাপরিদর্শকও প্রকারান্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ব্যবহারের কথাটি স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'অপরাধের সময় পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ব্যবহার করা অপরাধীদের একটা ধরন। ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা এসব ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই দায়ী করেছেন। অন্যদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কথাকে সত্য মেনে যদি ধরে নেওয়া হয়, অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ব্যবহার করছে, তাহলেও একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করছে কী? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন এ ব্যাপারে নীরব থাকছে? আবার নিখোঁজদের স্বজনদের অভিযোগ সত্য হলে জনমনে একটি প্রশ্ন দেখা দেবে। 'অপারেশন ক্লিনহার্ট', 'এনকাউন্টার', 'ক্রসফায়ার' ইত্যাদির মতো গুপ্তহত্যাও কি আরেকটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড? যদি তা না হবে, তাহলে একটি রহস্যও আজ পর্যন্ত উন্মোচিত হলো না কেন? হিউম্যান রাইটস ফোরাম অন ইউনিভার্সাল রিভিউ বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, 'সরকার কিছু কাজ করলেও দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।' বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুপ্তহত্যা এবং খোঁজ না পাওয়ার মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ওই সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কথায়ও উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষ নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে একটি দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিখোঁজ মানুষকে খুঁজে বের করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ দায়িত্ব পালন করবে। তা না হলে ব্যর্থতার দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।' একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, 'প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব।'
মানতে হচ্ছে, বেওয়ারিশ মৃতদেহের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে গুম-খুনের ঘটনাও। এক বছরে রাজধানী এবং এর আশপাশের এলাকায় ২২ ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে যাওয়াটা রীতিমতো আতঙ্কেরই ব্যাপার। এই নিখোঁজ রহস্য উন্মোচনের দায় সরকারের। সরকারি সংস্থাগুলো কি অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে? জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, 'অন্তত একটির রহস্য উন্মোচিত হওয়া দরকার।' কিন্তু সেই রহস্য উন্মোচন করবে কে?

No comments

Powered by Blogger.