বিএনপির আলোচনা-রাজাকার-আলবদরই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাৎ করে আওয়ামী লীগ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার সঙ্গে 'বিশ্বাসঘাতকতা' করেছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলের নেতারা বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে রাজাকার-আলবদররাই বেশি সক্রিয় ছিল।গতকাল বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় দলের নেতারা এসব কথা বলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম


আলমগীর বিজয় দিবস উপলক্ষে দু'দিনব্যাপী 'বিজয়মেলা ও আলোকচিত্র' প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। দেশকে মেধাশূন্য করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এতে যত না পাকিস্তানিদের ভূমিকা ছিল তার চেয়ে রাজাকার-আলবদররা সক্রিয় ছিল বেশি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করলেও তারাই স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করেছে। যুদ্ধের পর ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং অর্থনৈতিক মুক্তিসহ মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনা নস্যাৎ করেছিল আওয়ামী লীগ। সংবিধানকে খণ্ড খণ্ড করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। যারা এ ধরনের কাজ করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করার অধিকার রাখে না।
জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে মওদুদ বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। এ দলে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আওয়ামী লীগের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের রাজপথে নামতে হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশে নানা সংকট সৃষ্টি করেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য খালেদা জিয়া আবার রাজপথে নেমেছেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, বিজয়ের ঠিক আগে দেশকে মেধাশূন্য করতে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল; কিন্তু ওই হত্যার কেন বিচার হয়নি তা জাতির কাছে প্রশ্ন। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে যারা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেছিল, তাদের বিচার আগে করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, শওকত মাহমুদ, যুব সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অর্থ সম্পাদক আবদুস সালাম, শিক্ষা সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, ছাত্র সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দল সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।
আজ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
'স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সর্বনাশ হবে'
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সর্বনাশ হবে। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ওপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন।
জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের সভাপতি জাফর আহমেদ জয়ের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন, বিএনপি নেতা আবু নাসের মোঃ রহমতুল্লাহ প্রমুখ।
'বুদ্ধিজীবী হত্যা ও পিলখানা
হত্যা একই ষড়যন্ত্রের অংশ'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন চৌকষ সেনা কর্মকর্তা হত্যা একই ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, '৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারিনি। আর সে কারণেই জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে আছি।'
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপি নেতা আবু নাসের মোঃ রহমতুল্লাহ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.