পাঁচ কোটির কেনাকাটা আট কোটি টাকায় by এহসানুল হক ও আশরাফুল হক রাজীব

ষুধ ও যন্ত্রপাতিগুলো কিনতে সর্বোচ্চ খরচ হতো পাঁচ কোটি টাকা। কিন্তু তা কেনা হয়েছে আট কোটি টাকায়! পুকুরচুরির এ ঘটনা ঘটেছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি)। ৪০০ আইটেমের ওষুধ ও যন্ত্রপাতির দাম বাজারদরের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি দরে কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮ আইটেমের দাম ২৮০ শতাংশ বেশি দেখিয়ে ক্রয়সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে প্রমাণ
পেয়েছে তদন্ত কমিটি। শুধু তা-ই নয়, আগামী দুই বছরের মধ্যেও প্রয়োজন হবে না_এমন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী কিনে অর্থ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। দেশে হৃদরোগের অন্যতম প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্রের এ ঘটনায় ১১ চিকিৎসকসহ ১৩ জনকে দায়ী করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
কিন্তু কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় চার মাস আগে তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা পড়লেও কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে তেমন আগ্রহ নেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। দোষীরা ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকতে চাপ অব্যাহত রয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসক ও তাঁদের সহযোগীদের রক্ষা করতে চলছে জোর তদবির।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আলাদাভাবে তদন্ত করতে গঠন করা হয় সংসদীয় সাবকমিটি। একই সঙ্গে ঘটনা অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তোলপাড় শুরু হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্প্রতি দোষী সাব্যস্ত তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে বিভাগীয় মামলা। বাকি ১০ জনের নাম দোষীদের তালিকা থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অন্যদিকে তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলেও তা সুষ্ঠুভাবে তদারকির ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের তেমন কোনো আন্তরিকতা নেই।
উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরে এনআইসিভিডি ৪০০ আইটেমের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী কেনে। প্রতিটি আইটেম বাজারদরের চেয়ে অনেক গুণ বেশি দামে কেনা হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে একাধিক অভিযোগ আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করতে চলতি বছরের মে মাসে উপসচিব সুভাষ চন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি প্রথম দফায় অভিযোগের সত্যতা পেলেও কাউকে নির্দিষ্টভাবে দায়ী করেনি। পরে মন্ত্রণালয় একই কমিটিকে সম্পূরক তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর কমিটি গত আগস্ট মাসে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানায়, বাজারদরের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি দরে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি কেনার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক গত সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ওপর মহলের কোনো চাপ আছে কি না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'কোনো চাপ নেই।' দোষী সাব্যস্ত তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলেও বাকিদের বিরুদ্ধে হচ্ছে না কেন_এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, 'সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তিনি এর বেশি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ১১ জন চিকিৎসকের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সমর্থক। আর এ সংগঠনের বর্তমান সভাপতি হলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক।
প্রতিবেদনে যা আছে : তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ৬৮টি ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর দাম ২৮০ শতাংশ বেশি দেখানো ছাড়াও অন্যান্য ওষুধ ও যন্ত্রপাতির দামও কয়েক গুণ বাড়িয়ে বড় অঙ্কের বিল তৈরি করা হয়। এক খসড়া হিসেবে দেখা গেছে, ক্রয়কৃত ওষুধ ও চিকিৎসাসমগ্রী কেনা বাবদ ব্যয় হওয়ার কথা সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি টাকা বেশি খরচ দেখিয়ে বিল করা হয়েছে আট কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'স্বাভাবিকভাবে একই জিনিসের বেলায় পূর্ববর্তী অর্থবছর ও বর্তমান অর্থবছরের মধ্যে ১০ শতাংশ হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৬৮টি ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার ২৮০ শতাংশের মতো।' 'দরপত্র ও প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি' পূর্ববর্তী বছরের সংগ্রহ মূল্য বিশ্লেষণ করেনি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কমিটি চার চিকিৎসককে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদনে বলে, 'ওষুধ ও সামগ্রী ক্রয়ের ব্যাপারে তারা ব্যক্তিগত জ্ঞান কাজে লাগাননি মর্মে প্রতীয়মান হয়।'
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, উন্নত দেশের উচ্চমানের ওষুধ ও সামগ্রীর দাম দিয়ে নিম্নমানের ওষুধ ও সামগ্রী কেনা হয়েছে। তবে ওই সব ওষুধ ও সামগ্রী ব্যবহার করে ফেলায় তা প্রমাণ করার কোনো সুযোগ থাকছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এক বছরে হাসপাতালে যে পরিমাণ ওষুধ দরকার তার চেয়ে বেশি ওষুধ ও সামগ্রী কেনা হয়েছে। প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, 'কিছু সামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কেনা হয়েছে, যা আগামী দু-এক বছর চলবে।'
২০১০-১১ অর্থবছরে হৃদরোগ হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন ডা. আবুল হোসাইন খান চৌধুরী। তাঁকেও তদন্ত কমিটি দায়ী করেছে। ওষুধ কেনায় অনিয়মের প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি সরকারি চাকরি থেকে অবসরে চলে গেছি। তাই এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।'
স্ট্যান্ডার্ড রেটে দুর্নীতির সুযোগ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত সরকারি হাসপাতালগুলো কেনাকাটার সময় স্ট্যান্ডার্ড রেট (এসআর) পদ্ধতি অনুসরণ করে। অধিদপ্তর দুই বছর আগে ২০০৯ সালে এ রেট প্রণয়ন করে। কিভাবে এসআর নির্ধারণ করা হয় তার কোনো স্বচ্ছতা নেই। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয় না। এই এসআরের ওপর ভিত্তি করে কেনাকাটায় সরকারি অর্থের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে মন্তব্য করে তদন্ত কমিটি বলেছে 'ভবিষ্যতেও যদি বর্তমানে প্রচলিত এসআর বহাল থাকে, তবে সরকারকে আরো অর্থের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।'
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ স্ট্যান্ডার্ড রেটই যে সব সময় অনুসরণ করা হয়, তা নয়। বাজারদর যাচাই কমিটি কিছু ওষুধের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছে। একই পণ্য একই মানের হওয়ার পরও পণ্যের নামের সামনে একটি শব্দ যোগ করে দাম বাড়ানো হয়েছে চার গুণ। যেমন প্রতিটি ইন্টারভেনন্স ক্যানুলার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অথচ এর সামনে বি ব্রাউন শব্দ যোগ করে দর নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪০ টাকা। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে যে স্টেথিসকোপ সরবরাহ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। হাসপাতালটির উপপরিচালক এস টি এম আবু আজম তদন্ত কমিটিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, এ রকম স্টেথিসকোপের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি হবে না। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসআরে এই স্টেথিসকোপের দাম দেখানো হয়েছে ছয় হাজার ৫০০ টাকা।
হৃদরোগ হাসপাতালের জন্য যে ইকোকার্ডিওগ্রাফি প্রিন্টিং পেপার কেনা হয়েছে, তার এসআর ও বাজারদর দেখানো হয়েছে প্রতি প্যাকেট ১৩ হাজার টাকা। এগুলো নিম্নমানের বলে জানা গেছে। তদন্ত কমিটিকে হাসপাতালের স্টোরকিপার মো. সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন 'ডোনারদের মাধ্যমে প্রাপ্ত ইকোকার্ডিওগ্রাফি প্রিন্টিং পেপার সাদাটির মূল্য ৮৫৫ টাকা, কালারটির মূল্য ১০ হাজার টাকা।' উল্লেখ্য, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন সময় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ উন্নতমানের মেডিক্যাল সামগ্রী পাঠায়। তারা সর্বশেষ যে ইকোকার্ডিওগ্রাফি প্রিন্টিং পেপার পাঠিয়েছে, তার দামই তদন্ত কমিটির কাছে জানিয়েছেন স্টোরকিপার।
এসব অনিয়মের কথা তুলে ধরে তদন্ত কমিটি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে এসআর প্রণয়ন এবং সেটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছে। অবিলম্বে বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এসআর হালনাগাদ করারও সুপারিশ করেছে।
একই ওষুধ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কম্পানি তৈরি করে। ভিন্ন উৎসের কারণে ওষুধের মান ও দামে হেরফের হয়। উন্নত দেশের উচ্চমূল্যের ওষুধের আলোকে এসআর বা বাজারদর নির্ধারণ করা হয়, আর কেনা হয় নিম্নমানের ওষুধ। এখানে সরকারি ক্রয়-প্রক্রিয়ায় ঘাপলা রয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'পিপিআর অনুযায়ী সংগ্রহের সময় দেশ/কম্পানির নাম উল্লেখের সুযোগ না থাকায় দরপত্রে উচ্চমূল্য উল্লেখ থাকে, কিন্তু অসদুপায় অবলম্বন করে সরবরাহ করা হয় নিম্নমূল্যের ওষুধ ও সামগ্রী।'
প্রাথমিকভাবে যাঁরা অভিযুক্ত : তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে যাঁদের দোষী চিহ্নিত করেছে তাঁরা হলেন, বাজারদর কমিটির তিন সদস্য_এনআইসিভিডির ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের ডা. শেখ দাউদ আদনান, হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা (উন্নয়ন) মো. সুলতান আনসারী; সার্ভে কমিটির চার সদস্য_কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক মো. ফারুক, ফার্মাকোলজির সহযোগী অধ্যাপক ইরাম শাহরিয়ার, রেজিস্ট্রার (কার্ডিওলজি) মো. মাহবুবুর রহমান (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ নেতা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের-বিএমএ প্রচার সম্পাদক) এবং সহকারী অধ্যাপক (কার্ডিয়াক সার্জারি) মো. কামরুল হাসান (স্বাচিপ নেতা ও বিএমএর দপ্তর সম্পাদক)। এ ছাড়া দোষীদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন দরপত্র ও প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির চার সদস্য_ এনআইসিভিডির উপপরিচালক ডা. সাজেদুল ইসলাম, অধ্যাপক (কার্ডিওলজি) জি এম ফারুক, অধ্যাপক (কার্ডিয়াক সার্জারি) নাসিরউদ্দিন আহমেদ, পরিচালক ও অধ্যাপক আবুল হোসেইন খান চৌধুরী এবং স্ট্যান্ডার্ড রেট (এসআর) অনুমোদন কমিটির দুই সদস্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অর্থ) ডা. নুরুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আখতার হোসেন ভুঁইয়া। অভিযুক্তদের পাঁচজন ইতিমধ্যেই অবসরে চলে গেছেন।
তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা : বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে ডা. শেখ দাউদ আদনান, মাহবুবুর রহমান ও মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। দাউদ আদনানকে বাজারমূল্য অপেক্ষা বেশি দর নির্ধারণ করায় অভিযুক্ত করা হয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী তাঁকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয় এবং কেন তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না_তা ১০ দিনের মধ্যে জানানোর নোটিশ দেওয়া হয়। গত ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তাঁকে এ নোটিশ দেন।
দাউদ আদনান কালের কণ্ঠকে বলেন, '১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছিল। আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই উত্তর দিয়েছি। আমি যা বলার সেখানেই বলেছি। আর কিছু বলব না।'
এ তিনজনের পাশাপাশি সরকারি অর্থ তসরুপ করার দায়ে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুলতান আহমদ আনসারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশ দেওয়ার প্রায় তিন মাস পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ওষুধ কেনায় এ অনিয়মের তদন্ত হওয়ার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে জানতে পেরে আলাদাভাবে তদন্ত করতে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আমানউল্লাহকে প্রধান করে সংসদীয় সাব কমিটি গঠন করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। পাশাপাশি অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মোহাম্মদ আমানউল্লাহ গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, এনআইসিভিডির দুর্নীতি ও অনিয়ম-সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তকাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। ১৬ ডিসেম্বরের পর পরই সাব কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। তদন্তে প্রমাণিত হলে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বিদেশে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুদক থেকে ইতিমধ্যে হাসপাতালের পরিচালককে বেশি দামে ওষুধ, গজ, ব্যান্ডেজ, কার্টন, সার্জিক্যাল সামগ্রী, কেমিক্যাল, আসবাবপত্রসহ কেনাকাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, সিডিউল, প্রাপ্ত দরপত্র, তুলনামূলক বিবরণী, কমিটিগুলোর তালিকা ও তাদের সভার সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, বিল ও মালামাল গ্রহণের রেজিস্টার সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত দামে পণ্য কেনার কয়েকটি নমুনা : আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কম-বেশি দরে কেনাকাটার রীতি থাকলেও সেটি মানা হয়নি। যেমন তিন টাকার ডিসপোজাবল সার্জিক্যাল মাস্ক কেনা হয়েছে ২৫ টাকায়। ২০০৯ সালে যে ডিসপোজাবল সার্জিক্যাল ক্যাপ কেনা হয়েছে দুই টাকা ৯৭ পয়সায় পরের বছর তা কেনা হয়েছে ২৫ টাকায়। আইভি ক্যানেলা সাইজ ২২জি আগের বছর ১০ টাকায় কেনা হলেও গত বছর কেনা হয়েছে ১৯০ টাকায়। আইভি ক্যানেলা-২০জি দুই হাজার ৫০০টি কেনা হয়েছে ১৯০ টাকা করে। অথচ এর আগের বছর দাম ছিল মাত্র ১০ টাকা। দুই হাজারটি ইউরিন ক্যানেলা ব্যাগ কেনা হয়েছে ২৫ টাকা করে। অথচ আগের বছরেই এর দাম ছিল মাত্র ১০ টাকা। ৩০ টাকার ভেনাস এঙ্টেনশন ১৫০ টাকায় কেনা হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে থার্মোমিটার কেনা হয়েছিল ১৮ টাকা ৯০ পয়সায়। অথচ গত বছর প্রতিটি থার্মোমিটার কেনা হয়েছে ৮০ টাকায়। গত বছর ২২৫টি থার্মোমিটার কেনা হয়। আগের বছর ৪৭৮ টাকায় স্ট্রাটোস্কোপ কেনা হলেও গত বছর কেনা হয়েছে ছয় হাজার ৫০০ টাকা করে। আগের বছর ক্যানেলা নেবুলাইজার মেশিন ৭২ টাকা ৯০ পয়সায় কেনা হলেও পরের বছর অর্থাৎ ২০১০-১১ সালে কেনা হয় ৫৫০ টাকা করে। গত বছর প্রতি রোল ইকোপ্রিন্টিং পেপার কেনা হয়েছে ১৩ হাজার টাকায়। অথচ এর আগের বছর কেনা হয়েছে মাত্র ৯৪৫ টাকায়। ২৪ হাজার টাকার ক্রিটিনাইন কেনা হয়েছে ৪৮ হাজার টাকায়। আগের বছরে ১১ হাজার ৩০ টাকায় কেনা জিওটি পরের বছর কেনা হয়েছে ২৬ হাজার টাকায়। আগের বছর রিভলবিং চেয়ার কেনা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকায়। পরের বছর একই মানের রিভলবিং কেনা হয়েছে ২১ হাজার টাকায়। ১০ হাজার টাকার ইসিজি মেশিন কেনা হয়েছে ৩৯ হাজার টাকায়। ৬৫ টাকার সিপ্রফ্লোকসিন কেনা হয়েছে ৩৫০ টাকায়। ১১ টাকার জেনটামাইসিন কেনা হয়েছে ৩৫০ টাকায়।

No comments

Powered by Blogger.