চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া জরুরি নয়ঃ সময়মত বই ছেপে বিতরণের ব্যবস্থা নিন

ত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গুদামে যে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল, ৩৫ ঘণ্টারও বেশি সময় পর তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটেনি। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অগ্নিকাণ্ডে বই ও ছাপার কাগজ পুড়ে যাওয়ায় প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কীভাবে গুদামে আগুন লেগেছে, এখন পর্যন্ত তা পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার আগেই তাত্ক্ষণিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে একে নাশকতামূলক বলে অভিহিত করা হয়েছে। জানা গেছে, এনসিটিবি ভবনের নিচতলার গুদামে বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যপুস্তকের জন্য ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৩ রিম কাগজ এবং নতুন বছরে প্রথম থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপা ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬০১ কপি বই মজুত ছিল। আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। এর মধ্যে নতুন করে বই ছাপিয়ে যথাসময়ে বিতরণ করা নিয়ে স্বভাবতই সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এনসিটিবির কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন, সময়মত বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে এই অগ্নিকাণ্ডের কোনো প্রভাব পড়বে না। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, আগামী বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে না পারলে তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। তিনি আরও বলেছেন, যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে শিক্ষামন্ত্রীর এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। কারণ, এনসিটিবি গুদামে আগুন লাগার রহস্য উদ্ঘাটনে এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই জানা যাবে, এটি নিছক দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ। দুর্ঘটনা হলে তার প্রতিকার করতে হবে, আর নাশকতামূলক হলে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে—এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া যেভাবেই হোক নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষামন্ত্রীর এ ধরনের চ্যালেঞ্জ বাস্লল্য বলেই মনে হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, কাজটি খুব সহজ নয়। সরকারকে আবার টেন্ডার আহ্বান ও নতুন কাগজ কিনে বই ছাপানোর বন্দোবস্ত করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং চ্যালেঞ্জের বিষয়ও বটে। উল্লেখ্য, দেশে পাঠ্যবইয়ের বস্লমুখী সঙ্কট নতুন কিছু নয়। এ অবস্থায় এনসিটিবি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সেই সঙ্কটকে যেভাবে প্রকট করে তুলেছে তাতে বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন বৈকি! তাছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায়ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে তাদের কাজ শেষ করতে পারে না—এ অভিজ্ঞতা নতুন নয়। সেখানে এহেন বিপর্যয়ের মধ্যে সময়মত তারা বই ছাপার চাপ কুলিয়ে উঠতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকতেই পারে; কিন্তু যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে না পারলে আগামী শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। তখন এনসিটিবি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের অজুহাত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার চেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে সময়মতো বই ছেপে সুষ্ঠু বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া, যাতে আগামী শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবইয়ের অভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়।

No comments

Powered by Blogger.