স্কুলের দ্বিতীয় পালার শিক্ষক-মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পদায়ন শর্তের ফাঁদে by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

সারা দেশের ৮২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় পালার (শিফ্ট) জন্য ১৯৩৭ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয় সরকার। এরই মধ্যে ১৩৭৭ জন সাধারণ প্রার্থী। আর ৫৬০ জন প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। গত ১২ সেপ্টেম্বর সরকার সাধারণ প্রার্থীদের সবাইকে বিভিন্ন স্কুলে পদায়ন করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পদায়ন এখনো বাকি রয়ে গেছে।মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারা বলছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ মেনেই তাঁরা কাজ করছেন। সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে পদায়নের পরে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে পদায়নের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই ২৬০ জনের ভেরিফিকেশন শেষ হয়েছে।


মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, সরকারের এ আদেশের ফলে তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা শ্রীমন্ত রায় চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, একই পরীক্ষা ও পরীক্ষার্থীদের জন্য দুই আইন থাকতে পারে না। এটা বৈষম্য। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের দপ্তর সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, 'এমনটি হওয়ার কথা নয়। এ বৈষম্য নিরসনে শিক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।'
মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের সব প্রস্তুত। তাঁদের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান) পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট এলেই পদায়ন করা হবে।' তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই ৫৬০ জনের মধ্যে ২৬০ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হয়েছে। অন্যদের ভেরিফিকেশন দ্রুত শেষ করার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে মাউশি থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১১ সালের ৯ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রের 'ঘ' এবং 'ঙ' ধারায় বলা হয়েছে, 'মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের চূড়ান্ত নিয়োগের আগে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সব সার্টিফিকেটের মূল কপি যাচাই করিয়া সত্যতা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হইবেন।' পরিপত্রে আরো বলা হয়, 'চাকরিতে নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ করিতে হইবে এবং উক্ত পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরমে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যার ঘর সংযোজিত করিতে হইবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের রিপোর্টের তথ্যে এবং সার্টিফিকেটের তথ্যে অমিল পরিলক্ষিত হইলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করিয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন।'
মাউশির একজন কর্মকর্তা জানান, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যই পদায়নের আগে ভালো করে তাঁদের তথ্য যাছাই করা হচ্ছে। কারণ অনেক সময় দেখা যায়, ভুয়া সনদ ব্যবহার করেও কেউ কেউ চাকরি পেয়ে যান। তাই পদায়নের আগেই ভালো করে যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় পালার জন্য গত বছর এক হাজার ৯৬৮ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত বছরের ৯ জুলাই লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন রংপুরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষা হয়। ৩০ জানুয়ারি ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে গত জুলাইয়ে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে এক হাজার ৯৩৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে মেধাতালিকার এক হাজার ৩৭৭ জন সহকারী শিক্ষককে দ্বিতীয় শিফটে থাকা ৮২টি বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়াদের পদায়ন করা হয়নি। এই কোটার ৫৬০ জনের মধ্যে বাংলা বিষয়ে ৯৮, ইংরেজিতে ৯৮, গণিতে ৭৪, সামাজিক বিজ্ঞানে ৭৪, ভৌত বিজ্ঞানে ৪৯, জীববিজ্ঞানে ৪৯, ব্যবসায়িক শিক্ষায় ২৫, ভূগোলে ২৫, চারুকলায় ১০, শারীরিক শিক্ষায় ৯ এবং আরবি অথবা ইসলামিয়াতে ৪৯ জন শিক্ষক রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.