সাবেকদের খবরদারিতে খর্ব ছাত্রলীগের স্বাধীনতা! by পাভেল হায়দার চৌধুরী

ঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগ একটি স্বাধীন ছাত্র সংগঠন হলেও এর ওপর খবরদারি কমেনি সংগঠনের সাবেক নেতাদের। এসব নেতার খবরদারিতে আটকে আছে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো টার্গেট করে খবরদারিতে নেমেছেন সাবেক নেতারা। বিশেষ করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে রীতিমতো লড়াই চলছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে। আবার একেক নেতা একাধিক পদ চেয়ে বসে আছেন। কে কত বেশি পদ বাগিয়ে নিতে পারেন তারই যেন প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতার মূল কারণ ছাত্রলীগে নিজের প্রভাব বাড়ানো। মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনা না করে শুধু আস্থাভাজনদের পদ দিতে চাপাচাপি চলছে।


ছাত্রলীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি সংগঠনের নির্বাচিত সভাপতি এ এইচ এম বদিউজ্জান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ছাত্রলীগের কাউন্সিল হয় গত ১১ জুলাই।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পছন্দের লোক অন্তর্ভুক্তির জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংগঠনের কয়েকজন সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং একজন সাবেক সহ-সভাপতি। সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতিদের মধ্যে একজন বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়াও আছেন সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার ও সহ-সভাপতি সাইফুজ্জামান শিখর। কমিটিতে পছন্দের লোক আনতে তৎপর রয়েছেন সদ্যবিদায়ী সভাপতি মাহামুদ হাসান রিপন ও মাহাফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনও। তবে খবরদারির অভিযোগ স্বীকার করছেন না কেউ-ই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, নানক বরিশালকেন্দ্রিক ছাত্র নেতাদের কমিটিতে আনতে চাচ্ছেন। লিয়াকত ও শিখর তাঁর আস্থাভাজনদের নেতা হিসেবে দেখতে চান। তেমনি রিপন-রোটনও। আস্থাভাজনদের মেধা-যোগ্যতা না থাকলেও আপত্তি নেই তাঁদের। এসব জটিলতা নিরসন করতে হিমশিম খাচ্ছেন নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে গুঞ্জন আছে, সংগঠনের সভাপতি সোহাগ নির্বাচিত হয়েছেন শিখরের আশীর্বাদ নিয়ে আর সাধারণ সম্পাদক নাজমুলের ওপর আশীর্বাদ ছিল লিয়াকতের। অভিযোগ আছে, এ দুই সাবেক নেতার পছন্দের বাইরে গিয়ে সংগঠনের স্বার্থ দেখার সুযোগ কম সোহাগ-নাজমুলের।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার তাগিদে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও কমিটি ঘোষণা না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সাবেক নেতাদের চাপ। তা ছাড়া শেখ হাসিনা সাবেক সভাপতি রিপন, সাধারণ সম্পাদক রোটন এবং নতুন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে মিলে কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। নেতা নির্বাচন নিয়ে টানাপড়েনও চলছে এ কারণে। অভিযোগ আছে, নিজেদের আস্থাভাজন লোক রেখে কমিটিতে আধিপত্য করতে চাইছেন রিপন-রোটন। কিন্তু ছাড় দিতে নারাজ সোহাগ-নাজমুল। তবে গত সপ্তাহে তাঁরা বৈঠক করে কমিটি প্রায় চূড়ান্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
অপর একটি সূত্র মতে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা বানানোর তদবির করছেন মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতারাও। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। জানা গেছে, দলীয় প্যাড ব্যবহার করে তাঁদের পছন্দের নাম সুপারিশ করেছেন তাঁরা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে। এতে আরো বিপাকে পড়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে_জানতে চাইলে সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ কালের কণ্ঠকে জানান, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন। দেরি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ কিছু জটিলতার কারণে একটু সময় নিতে হচ্ছে। তবে প্রায় সব প্রক্রিয়া শেষ।
সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমও একই কথা জানান। তিনি বলেন, 'কারো আস্থাভাজন নয়, আমরা চাই ত্যাগীদের নেতৃত্বে আনতে।'
সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার খবরদারির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ছাত্রলীগ বিষয়ে তাঁর কোনো কৌতূহল নেই বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি সদ্য বিদায়ী সভাপতি মাহামুদ হাসান রিপন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেসসচিব হিসেবে তাঁর সঙ্গে থাকি। ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে থাকি। এর বাইরে নতুন কমিটি কেন, বিগত দিনেও কোনো কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করিনি। এবারের কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বেলায় হস্তক্ষেপ করে থাকলে এবং এর প্রমাণ কেউ দিতে পারলে হাতে চুড়ি পরব।'
সাবেক নেতাদের আস্থাভাজন হিসেবে যাঁদের নাম পাওয়া গেছে তাঁদের মধ্যে আছেন জহুরুল হক হলের আশরাফ, মুহসীন হলের রুমি, বঙ্গবন্ধু হলের শাহিন আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মোশতাক, ফজলুল হক হলের আজিজুল হক পাশা, সূর্যসেন হলের এরশাদ।
জানা গেছে, বয়সের অজুহাতে বেশ কয়েকজন মাঠের নেতাকে কমিটিতে পদ দিতে চাইছেন না সাবেক নেতারা। যদিও গঠনতন্ত্রে নিয়ম রয়েছে, কাউন্সিল পর্যন্ত যার বয়স ২৯ থাকবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি যতদিন পরই হোক এ সময়ের মধ্যে বয়স পেরিয়ে গেলেও তাদের পদ পেতে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতা দেখানো হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.