লোকমানের শোকসভায় বাদী-'দালালরা হুঁশিয়ার সাবধান'

রসিংদীকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতো আমার ভাই লোকমান। সেই মানুষটিকে আপনারা হত্যা করেছেন। যারা আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের নাম নরসিংদীবাসী জানে। আজও দালালরা আমাদের আশপাশে ঘুরঘুর করছে। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, সাবধান হয়ে যাও, হুঁশিয়ার, সাবধান।' নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার বাদী ও নিহত লোকমানের ছোট ভাই কামরুজ্জামান শোকসভায় এভাবেই তাঁর আবেগসিক্ত ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।


নরসিংদী পৌরবাসী শোকসভার আয়োজন করে। এ উপলক্ষে বিকেল থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার লোকজন মেয়র লোকমান হোসেন নির্মিত শাপলা চত্বরে হাজির হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আগমন বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে শোকসভাটি জনসভায় পরিণত হয়। শোকসভায় মেয়রের ভাইদের আবেগঘন বক্তব্যে অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। উপস্থিত সবাই মেয়র লোকমান হোসেনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
শোকসভায় মামলার সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে কামরুজ্জামান বলেন, 'মামলার তদন্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আদেশ দিয়েছেন। তার পরও কী করে আপনারা এই মামলা নিয়ে সমালোচনা করেন?' তিনি অনুরোধ করে বলেন, 'মামলা চলাকালীন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না। কে দোষী কে নির্দোষ, সেটা আদালতে প্রমাণ হবে।' তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, 'আমার ভাই লোকমান হোসেন আপনাকে ভালোবাসতো, বিশ্বাস করত। আমরাও আপনাকে ভালোবাসি। আর সেই ভালোবাসার অধিকার নিয়ে বলতে চাই, আপনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরাও আশ্বস্ত হয়েছি। আপনি আমাদের বিশ্বাস করতে বলেছেন, আমরা আপনাকে বিশ্বাস করেছি। এই বিশ্বাসের মর্যাদা আপনি দেবেন।'
কামরুজ্জামান আরো বলেন, 'আমার ভাই খুন হয়েছে, এ দেশের সাধারণ মানুষ কেঁদেছে, শ্রমিক কেঁদেছে কিন্তু কিছু শয়তান কাঁদেনি। ওরা কারা, ওদের চিহৃিত করুন। ওরা আপনার-আমার মাঝখানেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।'
মামলার বাদী আরো বলেন, 'আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। পৃথিবীর কোনো কিছুই আমার ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবি থেকে পিছু হটাতে পারবে না। আমার জীবনের আর কোনো শখ নেই, কোনো স্বপ্ন নেই। ভাইয়ের হত্যার বিচারই আমার শেষ চাওয়া।' কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামরুজ্জামান।
এদিকে এক দিনের ব্যবধানে ভিন্ন বক্তব্য দিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু বীরপ্রতীক। তিনি শোকসভায় উপস্থিত হয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত গতকালের বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি নিহত মেয়র লোকমান হোসেনকে নরসিংদীর সিংহপুরুষ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, 'লোকমানের কারণেই আমি রাজনীতিতে এসেছি। তাঁর সহযোগিতায় আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। এ কথা আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি।' তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, 'যত দ্রুত সম্ভব খুনিদের গ্রেপ্তার করুন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের যেমন ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে, তেমনি করে আমিও আমার ভাই লোকমানের হত্যাকারীদের ফাঁসির দড়িতে দেখতে চাই।'
শাপলা চত্বর নতুন বাজার কমিটির সভাপতি বশির আহমেদের সভাপতিত্বে শোকসভায় অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম, জেলা আওমী লীগের প্রচার সম্পাদক সামসুল আলম রাখিল, বাণিজ্য সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, নরসিংদী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বর্তমান প্যানেল মেয়র জহির আহমদ, সদর উপজেলার মহিষাশুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ আলম ও মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ।

No comments

Powered by Blogger.