হায়ার এডুকেশন কমিশন হচ্ছে by সাবি্বর নেওয়াজ

চ্চশিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন 'বাংলাদেশ হায়ার এডুকেশন কমিশন' (বিএইচইসি) নামে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে। কমিশনের চেয়ারম্যান পদমর্যাদায় হবেন একজন পূর্ণমন্ত্রী। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় কমিশনে পাঁচজন সদস্য থাকবেন। কমিশনের সচিব পদে দায়িত্ব পালন করবেন জনপ্রশাসনের একজন সচিব। ইতিমধ্যে এ কর্তৃপক্ষ গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইনের খসড়া তৈরি করেছে 'বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন' (ইউজিসি)। চলতি মাসেই তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে।


কমিশনের জন্য ইউজিসি ভবনের পশ্চিম পাশে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের জায়গায় ১৮ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের জমিতে পরিষদের উদ্যোগেই এ ভবন নির্মাণ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ইউজিসির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'বর্তমান ইউজিসি কেবল সরকারের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করতে পারে। যুগের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার দেখভাল করতে ব্যবস্থা গ্রহণের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক কর্তৃপক্ষ দরকার। নতুন প্রণীত শিক্ষানীতিতেও এ কথা বলা আছে।' তিনি বলেন, 'সরকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ ইউজিসি প্রায় শেষ করে এনেছে। শিগগিরই তা
বিবেচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।'
ইউজিসি সূত্র জানায়, উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করা হলে এটিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা কেউ ভঙ্গ করলে সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় চলতি বছরের মে মাসে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে ইউজিসি এ বিষয়ে তার মতামত নেয়।
নতুন এ কমিশনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারের কাছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিদ্যমান গঠন ও বিধিগত অবস্থা কমিশনের উদ্দেশ্যের জন্য অপর্যাপ্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের পর দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নজরদারির ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এতে বলা হয়, একাডেমিক বিষয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম মূল্যায়ন এবং চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা নিরূপণের জন্য কমিশন যখন মনে করবে তখন বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করতে পারবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে বা কোনো ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করতে পারবে এবং তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। কমিশনের দেওয়া কোনো নির্দেশ বা সুপারিশ যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুসরণ ও পালনে ব্যর্থ হয়, তবে কমিশন ওই ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে প্রস্তাবিত মঞ্জুরি স্থগিতসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। খসড়ায় আরও বলা হয়, দেশে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং বিদ্যমান কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোনো বিভাগ, অনুষদ, ইনস্টিটিউট, প্রোগাম বা কোর্স চালুর জন্য নূ্যনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করবে কমিশন। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির নূ্যনতম যোগ্যতা এবং শর্তাবলি কমিশন নির্ধারণ করতে পারবে।
নতুন ১৮ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা : ইউজিসি সূত্র জানায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইউজিসি ভবনের পশ্চিম পাশে 'বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের' (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সংগঠন) মালিকানাধীন দেড় একর (৩০ কাঠা) জমিতে নতুন ১৮ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিষদের সভাপতি ডা. প্রাণগোপাল দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ ভবন নির্মাণে কারিগরি সহায়তা দেবে। এ ভবনেই দুটি ফ্লোর নিয়ে হায়ার এডুকেশন কমিশনের কার্যালয় পরিচালিত হবে। জানা গেছে, ভবনটি নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে এ ভবন নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এলামনাইসমূহের সহায়তা নিতেও প্রধানমন্ত্রী ভিসিদের পরামর্শ দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভিসি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিপুল অঙ্কের তহবিল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের পক্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। বিনিময়ে তারা ১৮ তলা ভবনের আটটি তলার স্থায়ী মালিকানা পাবে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আলাপ-আলোচনা চলছে। এ ভবন নির্মাণের জন্য বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আবদুল মান্নান আকন্দকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, এখানে আসলে দুটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভবনের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি জানান, এ ভবনে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার লিয়াজোঁ অফিস ও রেস্ট হাউস, লাইব্রেরি, আইটি ভিলেজ, কনভেনশন সেন্টার, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম রুম, অডিটোরিয়াম ও হায়ার এডুকেশন কমিশনের অফিস থাকবে। এ ছাড়া অফিস ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্যও স্পেস থাকবে। শিগগিরই এসব ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

No comments

Powered by Blogger.