মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টার আশঙ্কা : ইরানে হামলার পরিণতি হবে ভয়াবহ

রানের ওপর হামলার বিষয়ে এবার স্বয়ং মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের হামলার ফল হবে মারাত্মক এবং অকল্পনীয়। প্যানেট্টা আরও বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইরানের ওপর হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে এবং এ অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন সেনারাও ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হবে। তিনি বলেন, হামলা করলে বড়জোর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি তিন বছর দেরি করানো যাবে কিন্তু তা পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। সামরিক হামলা ব্যর্থ হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। প্যানেট্টা বলেন, আমি মনে করি, এসব বিষয় খুব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার।


তিনি সামরিক হামলার পরিবর্তে ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠিন অবরোধ আরোপ করার কথা বলেছেন। এ সম্পর্কে সাংবাদিকরা প্যানেট্টাকে প্রশ্ন করেছেন—যদি কঠিন অবরোধেও ইরানের আচরণে পরিবর্তন না আসে তখন কী হবে? এর জবাবে প্যানেট্টা বলেছেন, আমি আশা করি ইরান সে পর্যায়ে যাবে না।
প্যানেট্টার এসব মন্তব্যের ফলে মনে করা হচ্ছে, ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা থেকে মার্কিন প্রশাসন সরে এলো। গত কয়েকদিন ধরে ইরানের ওপর মার্কিন ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে নানা জল্পনা চলছিল। গত রোববার ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর হামলার সম্ভাবনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুদ্ধমন্ত্রী এহুদ বারাকও ইরানের ওপর সামরিক আগ্রাসন চালানোর জন্য মন্ত্রিসভার সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করে আসছিলেন।
তবে ইরান সবসময় এ ধরনের হামলার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে এবং হামলা হলে তার কঠিন ও তাত্ক্ষণিক জবাব দেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। গতকাল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন, যদি কোনো দেশ ইরানের ওপর হামলা চালায় তাহলে তাকে অবশ্যই পাল্টা ও ইস্পাত কঠিন মুষ্টাঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেছেন, যদি কারো মনে তেহরানের ওপর হামলার বিষয়ে কোনো চিন্তা আসে তাহলে তাকে ইরানের জনগণ, সেনাবাহিনী, ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজের কঠিন জবাব মোকাবিলা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য চেষ্টা করছে বলে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। ইরান আইএইএ’র এ প্রতিবেদনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এ ধরনের তত্পরতার নিন্দা জানিয়েছে।
ইরানের শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ জাজায়েরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইসরাইল ইরানে হামলা চালালে ইতিহাসের পাতা থেকে ইসরাইলের নাম চিরতরে মুছে যাবে। ইরানের সশস্ত্রবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের সংস্কৃতি ও প্রচার বিভাগের সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ জাজায়েরি আরবী ভাষী স্যাটেলাইট টেলিভিশন আল আলমকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে এই কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইল এটা ভালো করেই জানে, ইরানের বিরুদ্ধে তার ক্ষুদ্রতম পদক্ষেপও দখলদার এই শক্তির অস্তিত্বকে হুমকিগ্রস্ত করবে। মাসুদ জাজায়েরি আরও বলেছেন, ইসরাইলের ডিমোনা পরমাণু স্থাপনা ইরানের জন্য সবচেয়ে সহজ টার্গেট এবং তেহরানের ধ্বংস করার ক্ষমতা আরও অনেক বেশি।
এদিকে ইরানের জাতীয় সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনের কর্মকর্তা মোস্তফা কাওয়াকাবিয়ানও একই ধরনের মন্তব্য করে বলেছেন, ইসরাইল ইরানের ভেতরে ক্ষুদ্রতম আঘাত করার আগে দখলদার এই দেশটির অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলার হুমকিকে প্রচারণাগত ধোঁকাবাজি হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো বিদেশি শক্তির সম্ভাব্য হামলার জবাব হবে বিধ্বংসী বা পুরোপুরি ধ্বংসাত্মক।
এদিকে ইরান ও রাশিয়া গতকাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি কৌশলগত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদের উপসচিব আলী বাকেরি এবং তার রুশ সমকক্ষ ইউভগেনি লুকইয়ানোভ মস্কোয় ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পরমাণু ইস্যুতে ইসরাইল যখন ইরানের ওপর হামলার হুমকি দিচ্ছে ঠিক সে সময়ই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলো। চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ক্ষেত্রে সহযোগিতার পাশাপাশি আর্থ-রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হবে বলে আলী বাকেরি জানিয়েছেন।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করতে ইরানের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে রাশিয়া সফর করছেন। প্রতিনিধিদলটি রুশ নেতাদের সঙ্গে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ’র অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন। সম্প্রতি রাশিয়া ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে আইএইএ’র নতুন প্রতিবেদনের বিরোধিতা করেছে। আইএইএ’র নতুন প্রতিবেদনকে উত্তেজনা বাড়ানোর উত্স ও হতাশাব্যঞ্জক বলেও মন্তব্য করেছে মস্কো।

No comments

Powered by Blogger.