মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বললেন-এবারের সম্মেলন সময়ের অপচয় মনে হয়নি

ক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সভাপতি হিসেবে মালদ্বীপ তার মেয়াদে সার্কের প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আদ্দু নগরীর ইকুয়েটরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, 'এবারের সম্মেলন থেকে আশাবাদী হওয়ার অনেক কারণ আছে। একে কোনোভাবেই ব্যর্থ বলা যাবে না। এবার মনে হয়নি সময়টা অপচয় হয়েছে।' আড়াই দশকেও সার্ক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলে সমালোচনা রয়েছে বিভিন্ন মহলে।


গত বছর ভুটানে ষোড়শ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদও সার্ক নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন।
এবারের শীর্ষ সম্মেলনের আগে আসিয়ানের আদলে পর্যবেক্ষকদের সার্কের ডায়ালগ পার্টনার স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি উল্লেখ করে নাশিদ জানান, ডায়ালগ পার্টনারের পাশাপাশি পর্যবেক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং তাঁদের কাজের পরিধি নির্ধারণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
চীনকে সার্কে আরো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে এনে মালদ্বীপ ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে কি না জানতে চাইলে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারত মালদ্বীপের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, যার ওপর তার দেশ বিশ্বাস রাখে। অন্যদিকে চীনের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকরা যেমন ছিল, তেমনই আছে।
মানবাধিকার বিষয়ে সার্কের অবস্থান সম্পর্কে নাশিদ বলেন, সকালে সার্ক দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনার সময় তাঁদের সবাইকে এ ব্যাপারে অত্যন্ত ইতিবাচক মনে হয়েছে। তাঁদের অনেকেই জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাই তাঁরা মানবাধিকারের গুরুত্ব বোঝেন।
'সেতুবন্ধ রচনা' প্রতিপাদ্য নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুই দিনব্যাপী ওই সম্মেলন শুরু হয়। গতকাল বিকেলে সম্মেলনের অধিবেশন শুরু এবং চারটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর পর্যবেক্ষক অস্ট্রেলিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মরিশাস, মিয়ানমার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সার্ক নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। এবারই প্রথম পর্যবেক্ষকরা সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেলেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর সম্মেলনস্থল ছাড়েন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। অন্যদিকে জরুরি কাজ থাকায় দুপুরেই নিজ দেশের উদ্দেশে রওনা দেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। এর ফলে প্রেসিডেন্ট নাশিদ বক্তব্য দেওয়ার সময় অনুষ্ঠানস্থলে আট দেশীয় সার্কের সরকারপ্রধানদের মধ্যে পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের সভাপতি প্রেসিডেন্ট নাশিদ অবশ্য বলেছেন, 'অন্য কাজ থাকায় আমাদের অনেককে ফিরে যেতে হচ্ছে।'
প্রতিকূলতাকে জয় করে সেতুবন্ধ রচনা: রাজধানী মালে থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে আদ্দু নগরীতে এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ছিল কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণে প্রথম সম্মেলন। যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত প্রতিকূলতাকে জয় করে ভারত মহাসাগরের মাঝে প্রত্যন্ত কয়েকটি দ্বীপজুড়ে ছিল এবার সার্ক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। সম্মেলন উপলক্ষে এ দ্বীপগুলোর মধ্যে রাস্তা নির্মাণ করে সেতুবন্ধ রচনা করা হয়েছে। আদ্দু থেকে এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে যে সেতুবন্ধ রচনার যাত্রা শুরু হয়েছে, তা আগামী দিনে নতুন মাত্রা পাবে বলে শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেছেন। সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হবে নেপালে।

No comments

Powered by Blogger.