ইভা হত্যাকাণ্ড-ধর্ষণের পর গলা টিপে মেরে ফেলে জাকির

মামার বাসায় বেড়াতে এসেছিল শিশু স্কুলছাত্রী ইশরাত জাহান ইভা। ড্রয়িংরুমে বসে সে টেলিভিশনে কার্টুন দেখছিল। এ সময় কথা আছে বলে তাকে ডেকে নিয়ে যায় পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া কলেজছাত্র জাকির আহম্মেদ। পরে সেখানেই শিশুটিকে ধর্ষণ করে জাকির। এখানেই থেমে থাকেনি পাষণ্ড। ছয় বছর বয়সের অবুঝ শিশুটিকে সে গলা টিপে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে দেয়। খুনি-ধর্ষক জাকির এরপর ইভার মামার মোবাইলে ফোন করে অপহরণ নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর খিলক্ষেত নামাপাড়ায়। র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর জাকির স্বীকারোক্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।


সূত্র জানায়, জাকির ইভাকে কক্ষে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করে। এ সময় ইভা সবাইকে বলে দেওয়ার ভয় দেখালে জাকির তাকে গলা টিপে হত্যা করে। পরে বস্তায় লাশ ভরে নিজের খাটের নিচে রেখে দেয়। এদিকে সবাই ইভাকে খুঁজতে থাকলে জাকির নিজেও তাতে শামিল হয়। ইভার মা-বাবা ও মামাদের সঙ্গে জাকিরের ভাই রফিক, সাইফুলও খোঁজাখুঁজিতে যোগ দেয়। পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়রা সম্ভাব্য সব জায়গায় ইভার খোঁজ করেও ব্যর্থ হয়। একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয় খিলক্ষেত থানায়। জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার দিনই রাত ৯টার দিকে ইভার মামার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তি ইভাকে অপহরণ করেছে জানিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ১২ নভেম্বরের চার লাখ টাকা দাবি করে। ৬ নভেম্বর রাতে অপহরণকারীরা মুক্তিপণের জন্য আবার ফোন করে। পরে ইভার পরিবারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত তারিখেই টাকা দিতে চাইলে অপহরণকারীরা টাকা নিতে অনীহা প্রকাশ করে এবং ইভার মামাকে নানা ধরনের হুমকি দেয়।
ঈদুল আজহার দিন সোমবার সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে প্রতিবেশী এক মহিলার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পার্শ্ববর্তী ডোবা থেকে খিলক্ষেত থানার পুলিশ বস্তাবন্দি একটি লাশ উদ্ধার করে। ইভার বাবা লাশটি তাঁর মেয়ের বলে শনাক্ত করেন। বিষয়টি র‌্যাবকে জানালে তারা গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে।
র‌্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ ঢাকার একটি বিশেষ দল বৃহস্পতিবার নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চংনোয়াগাঁও গ্রাম থেকে জাকিরকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানায়, ইভাকে তার কক্ষে আনার পর আনুমানিক এক ঘণ্টার মধ্যেই সে তাকে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে রাখে। পরে রাতের অন্ধকারে লাশ বাসার পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। ৭ নভেম্বর লাশ পাওয়া যাওয়ার পর সে আত্মগোপন করেছিল।
র‌্যাব ১-এর মেজর রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে জানান, গ্রেপ্তারের পর জাকির নিজেই বলে, 'যে অপরাধ করেছি তার জন্য আমার ফাঁসি হওয়া উচিত। আমি ধর্ষণ, হত্যা ও মুক্তিপণ চাওয়ার মতো বড় তিনটি অপরাধ করেছি। আমার মাঝে কিভাবে পশুত্ব জেগে উঠেছিল, নিজেও বুঝতে পারছি না।'
ইভার মামা স্বপন জানান, রাজধানীর খিলক্ষেত নামাপাড়ায় বোটঘাট এলাকার ক-২১১/২/এ নম্বর বাড়িতে তাঁরা ভাড়া থাকেন। কিছুদিন আগে বাসার একটি কক্ষ সাবলেট দেন জাকিরের বড় ভাই সাইফুল ইসলামকে। কক্ষটিতে তিনি দুই ভাই জাকির ও রফিককে নিয়ে থাকতেন। জাকির টঙ্গী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। তিনি বলেন, ভাগি্ন ইভা প্রায়ই তাঁর বাসায় এসে থাকত। সে সুবাদে ইভাও জাকিরকে চিনত। তিনি জানান, জাকিরকে গ্রেপ্তারের পর তাঁরা জানতে পেরেছেন যে ৩ নভেম্বর দুপুরে ইভা তাঁর বাসায় টিভিতে কার্টুন দেখছিল। সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ থেকে বাসায় ফেরে জাকির। দুপুর ১টার দিকে ইভাকে ছবি আঁকার কথা বলে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। এমনকি মারা গেছে কি না, তা নিশ্চিত করতে সে শিশুটির লাশে গরম পানি ঢেলে পরীক্ষা করে দেখে।
স্বপন আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই জাকির তাদের কক্ষটি বন্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে ইভার নানি ওই কক্ষে গিয়ে জাকিরকে ডাক দেন। তখন জাকির কক্ষ থেকে বের হয়ে জানায়, সে ইভাকে দেখেনি। পরে সে নিজেও দরজা বন্ধ করে অন্যদের সঙ্গে ইভাকে খুঁজতে বের হয়। তিনি জানান, ইভা নিখোঁজ হওয়ার এক দিন পর জাকিরের ভাই সাইফুল গ্রামের বাড়িতে চলে যান। জাকির ও তার ভাই রফিক ঈদের দিন লাশ পাওয়ার পর পরই বাসা ছেড়ে চলে যায়।
ইভার বাবা ইউসুফ আলী জানান, তিনি বিআরটিসি বাসের চালক। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। ইভা পাশেই আল মানারাত মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে নার্সারির ছাত্রী ছিল।

No comments

Powered by Blogger.