দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, কাওরাকান্দি-মাওয়া-এবার ফেরার দুর্ভোগ চরমে

বিত্র ঈদুল আজহা শেষে মানুষ ইতিমধ্যে কর্মস্থল ঢাকার উদ্দেশে ছুটতে শুরু করেছে। তবে গতকাল শুক্রবার জনস্রোত কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সকাল থেকে ঢাকামুখো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঢল নামে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও কাওরাকান্দি-মাওয়া ঘাটে। শত শত গাড়ির চাপ, কিন্তু নেই পর্যাপ্ত ফেরি। তাই ঈদের আগে বাড়ি ফেরার মতোই দুর্ভোগের সীমা ছিল না ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের।


গতকাল দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট সরেজমিনে দেখা গেছে, টার্মিনালের বিশাল পার্কিং ইয়ার্ড বিভিন্ন মালবোঝাই ট্রাকে পরিপূর্ণ। অন্যদিকে ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার রাস্তার এক পাশে বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ির দীর্ঘ সারি। অনেক স্থানে গাড়ির দু-তিন সারি সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে রাস্তা বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে আছে। এতে ফেরি থেকে নামা গাড়িগুলোও বের হতে পারছে না। তা ছাড়া লঞ্চ পারাপারের বিভিন্ন পরিবহন বাসযাত্রীদের ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মহাসড়কের ওপর নামিয়ে দেওয়ায় যাত্রীরা বাধ্য হচ্ছে সেখান থেকে দীর্ঘ পথ হেঁটে লঞ্চঘাটে যেতে।
ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুবর্ণ পরিবহনের যাত্রী কানিজ ফাতেমা রওশন বলেন, 'গোয়ালন্দ বাজার এলাকায় যানজটে আটকা পড়েছি। পরে কোনো উপায় না দেখে বাস থেকে নেমে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে লঞ্চঘাটে এসেছি।'
ঘাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রয়োজনীয় ফেরি না থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আবুল বাসার জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দৌলতদিয়া ঘাট অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন মালবোঝাই শতাধিক ট্রাক গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় আটকে রাখা হয়েছে। ঘাটের পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে ওই ট্রাকগুলো ছাড়া হবে।
বিআইডাবি্লউটিসির দৌলতদিয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এই নৌরুটে নিয়মিত ১২টি রো রো (বড়) ফেরির প্রয়োজন হলেও বর্তমান সেখানে সচল রয়েছে মাত্র ৯টি ও একটি কে-টাইপ (ছোট) ফেরি। পাশাপাশি ফেরিগুলো অনেক দিনের পুরনো হওয়ায় মাঝেমধ্যেই কোনো কোনো ফেরি বিকল হয়ে পড়ছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডাবি্লউটিসির এ জি এম জিল্লুর রহমান বলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এই নৌরুটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো এখন খুবই জরুরি।' তিনি জানান, দৌলতদিয়া ঘাটের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো দু-তিন দিন সময় লাগতে পারে।
পদ্মা সেতু কবে হবে? : গতকাল ঢাকামুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল মাওয়া ঘাটের প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে। বাসের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাসে চড়তে হয়েছে যাত্রীদের। ছাদে চড়ে কিংবা ছাদে ওঠার সিঁড়িতে ঝুলে ও বাসের ভেতরে গাদাগাদি করে ঢাকার দিকে ছুটেছে যাত্রীরা। এ সময় মাওয়া ঘাট থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
দুপুর ১২টার পর থেকেই মাওয়া ঘাটে ঢাকামুখো দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। দুপুর ২টার দিকে তা তীব্র আকার ধারণ করে। প্রতিটি বাস কাউন্টারেই ছিল দীর্ঘ লাইন। কোনো কোনো কাউন্টারের লাইন এতই দীর্ঘ ছিল যে শেষ পর্যন্ত তা গ্রামের মধ্যে চলে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে একটি বাস ঢাকা থেকে এলেই তাতে উঠতে যাত্রীদের হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে।
লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীদের চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশু যাত্রীদের অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হতে হয়। ঈদে আসা-যাওয়ার পথে মাওয়া ঘাটে দীর্ঘ যানজট আর যাত্রীদের ভোগান্তি যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। তাই খুলনা থেকে আসা এক যাত্রী আক্ষেপ করে বললেন, 'পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আজ আমাদের এখানে আর দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। পদ্মা সেতু কবে হচ্ছে বলতে পারেন ভাই?'
ইজারাদারের দাপট : এদিকে ভাড়া বৃদ্ধিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাতে গেলে ঘাট ইজারাদারের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে বিরোধে গতকাল দুুপুরে মাওয়া-কাওরাকান্দি রুটে আধা ঘণ্টা লঞ্চ-স্পিডবোট-ট্রলার চলাচল বন্ধ ছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘাট সূত্র জানায়, গতকাল সকাল থেকেই মাওয়া-কাওরাকান্দি নৌরুটে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলারগুলোতে ঢাকাগামী যাত্রীদের ঢল নামে। এ সময় অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী বোঝাইয়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ এনামুল কবির দুটি ট্রলারের চালককে জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত ট্রলার, লঞ্চ ও স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে বাধা দিলে ইজারাদারের পক্ষের নেতা ফজলু মুন্সীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুর ১২টার দিকে ইজারাদার পক্ষ ও ঘাট সংশ্লিষ্টরা তাৎক্ষণিক লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে শিবচর থানার ওসি আ. রাজ্জাকসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করে।
শিবচর থানার ওসি আ. রাজ্জাক বলেন, 'অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী বোঝাইয়ে বাধা দেওয়া নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে ঘাট ইজারাদারের পক্ষের ভুল বোঝাবুঝিতে লঞ্চসহ নৌযান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে আধা ঘণ্টার মধ্যেই আমরা গিয়ে নৌযান চালু করেছি।'

No comments

Powered by Blogger.