অপরাধে এবার মোবাইল ফোনের বিদেশি সিম by সজল জাহিদ

মোবাইল ফোনকেন্দ্রিক বড়সড় অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে বিদেশি মোবাইল ফোন অপারেটরের রোমিং সিমের ব্যবহার বাড়ছে। ঢাকায় বসেই ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড বা অন্য দেশের মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহার করে হরদম নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে অপরাধীরা। চাঁদা দাবিসহ নানাভাবে হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখানোর কাজও এখন রোমিং করা বিদেশি সিম দিয়েই করা হচ্ছে। প্রতারণার ফাঁদ তৈরির কাজেও অপরাধীচক্র রোমিং করা বিদেশি সিম ব্যবহার করছে।


দেশি সিমে চাঁদা দাবি বা হুমকির ঘটনা ঘটলে র‌্যাব-পুলিশ সহজেই অপরাধীকে খুঁজে বের করতে পারে। অন্যদিকে বিদেশি মোবাইল ফোনের রোমিং সিমে অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীকে খুঁজে বের করা এবং অবস্থান নির্ণয় করা কঠিন। চাঁদাবাজি এবং হুমকির অভিযোগে আগে যে হারে দেশীয় অপারেটরের সিম বন্ধ করা হতো, সেই সংখ্যা অন্তত এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে।
র‌্যাব এবং পুলিশের বিভিন্ন সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে রোমিং সিমে অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারেন না, ফোনটি কোন জায়গা থেকে এসেছে। সে কারণে র‌্যাব বা পুলিশের কাছেও তারা অভিযোগ করেন না।
পুলিশের একটি সূত্র সমকালকে নিশ্চিত করেছে, 'ডাকাত শহীদ'-এর নামে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানির সিম থেকে ফোন পাওয়ার কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছেন তারা। ঢাকায় বসেই কেউ ভারতীয় মোবাইল ফোনের রোমিং সিম ব্যবহার করে নিজেকে 'ডাকাত শহীদ' পরিচয় দিয়ে কথা বলে। ডিএমপির সাইবার ক্রাইম বিশেষ সেলের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত বিদেশি নম্বর থেকে ফোন এলে মানুষ সমীহ করে কথা বলে। এ সুযোগই অনেকে নিচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। এ বিষয়ে গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মোঃ সোলায়মান বলেন, তারাও এমন রোমিং
সিম ব্যবহারের কথা জেনেছেন। তবে তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় বসে বিদেশি রোমিং সিম দিয়ে কথা বলায় খরচ একটু বেশি হওয়ায় সাধারণভাবে এ সিমের ব্যবহার হয় না। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার উদ্দেশ্যে অপরাধীরা রোমিং সিম ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ছে। জানা গেছে, মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানির রোমিং করা সিম দিয়ে ঢাকায় বসে দেশের মধ্যে কথা বলতে মিনিটে প্রায় ৫০ টাকা খরচ পড়ে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া থেকে করা আইএসডি কল এবং একই সঙ্গে রোমিং চার্জ যুক্ত হয়। একইভাবে ভারত, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডের সিমও অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতের সিম দিয়ে একই পদ্ধতিতে কথা বলার খরচ তুলনামূলক কম। বিদেশি কোম্পানির সিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণত সেসব অপারেটরের সিমই ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর ব্যবসা একই সঙ্গে বাংলাদেশেও আছে। বাংলাদেশের 'রবি'র মূল কোম্পানি মালয়েশিয়ার আজিয়াটা। সে ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় আজিয়াটার 'সেলকম' সিম ঢাকায় অনেক ব্যবহৃত হয়। একইভাবে শ্রীলংকায় আজিয়াটার অপারেটরের নাম ডায়ালগ। এ ডায়ালগের রোমিং সিমের ব্যবহারও ঢাকায় অনেক দেখা যায়।
গ্রামীণফোনের মূল কোম্পানি টেলিনরের ব্যবসা রয়েছে পার্শ্ববর্তী ভারত, থাইল্যান্ড, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশে। টেলিনরের ওই সব অপারেটরের রোমিং সিমও ঢাকায় হরহামেশা ব্যবহৃত হয়। একইভাবে পাকিস্তানের মবিলিংক এবং ভারত থেকে এয়ারটেল নম্বরের অনেক ফোন পাওয়া যায় বাংলাদেশ থেকে।
সদ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এক যুবক বলেন, তার প্রেমিকার বাবাকে ভয় দেখাতে ইংল্যান্ডের ভোডাফোন কোম্পানির রোমিং সিম ব্যবহার করেন তিনি।
র‌্যাব বলছে, রোমিং সিম দিয়ে ঢাকায় অপরাধ করার ঘটনার অনেক অভিযোগ পেয়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে তাদের করণীয় খুব কম বলে জানান সংস্থাটির মিডিয়া উইংয়ের প্রধান কমান্ডার এম সোহায়েল।
গ্রামীণফোনের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার কাজী মনিরুল কবির বলেন, রোমিং সিমের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হতে পারে; যাতে অন্য কোনো দেশের সিম দিয়ে কেউ কোনো অপরাধ করলে সেই দেশের সরকারের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া বিশেষ একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বের করতে পারে যে, রোমিং সিমটি কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঢাকায় বসেই বিদেশি বিভিন্ন অপারেটরের সিম পেতে পারেন গ্রাহক। ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডের সিমও ঢাকার অনেক ট্রাভেল এজেন্টের কাছে পাওয়া যায়।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ সমকালকে বলেন, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন। রোমিং সিমের অপরাধ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
দেশি সিম থেকে অপরাধ বিদেশি সিমে :আগে দেশি সিমে অপরাধ হলেও এখন তা অনেক কমে গেছে। ২০০৮ সালের শেষ চার মাসে যেখানে ৮৯৫টি অভিযোগে ১ হাজার ৩২৩টি সিম বন্ধ করা হয়েছিল; সেখানে চলতি বছর প্রথম দশ মাসে ২০৯টি অভিযোগ পেয়েছে ডিএমপির গোয়েন্দা অপরাধ বিভাগ। সিম বন্ধ করা হয়েছে ২৮৯টি। ২০০৯ সালে ১ হাজার ৩৯৬টি চাঁদা দাবি ও হুমকির অভিযোগে ২ হাজার ৪৯৬টি সিম বন্ধ করা হয়। আর ২০১০ সালে ৭৯৫টি অভিযোগে ১ হাজার ৭০টি সিম বন্ধ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.