পশ্চিমাদের পরবর্তী বিনিয়োগ গন্তব্য কম উন্নত দেশ

চীন কিংবা ভারত নয় বরং বিশ্বের অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলোই পশ্চিমা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী গন্তব্য। যার বেশিরভাগ দেশই রয়েছে আফ্রিকায়, যেগুলো দুর্ভিক্ষ, খরা, দুর্নীতি আর যুদ্ধবিগ্রহের দেশ হিসেবেই জানে পশ্চিমা উন্নত বিশ্ব।পশ্চিমা দেশগুলোর বাজার যখন অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ দুর্বল, তখন বিনিয়োগকারীরা প্রবৃদ্ধি আর নতুন ক্রেতার খোঁজে কোথায় যাবেন? উন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০ এর এ সপ্তাহের সম্মেলনে এরকম একটি প্রতিবেদন পেশ হতে যাচ্ছে বলে সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে।


বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে, উন্নত দেশের বিনিয়োগকারীরা কেন ইথিওপিয়ায় গিয়ে বিনিয়োগ করবেন সেটি বোঝা যাবে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিসআবাবার একটি বাজার ‘বেলকাটো’তে গেলে। যেটি আফ্রিকার সবচেয়ে বড় এবং এর বিস্তৃতি দিনদিন ইথিওপিয়ার অর্থনীতির মতোই বড় হচ্ছে। ইথিওপিয়া এমন একটি দেশ যেখানে মানুষ প্রতিদিন প্রচুর পণ্য ভোগ করে থাকেন। এখানকার ভোক্তাদের অধিকাংশই ২৫ বছরের কম বয়সী। আর বয়সে তরুণ। তাদেরই একজন মধ্য আদ্দিসআবাবার বাসিন্দা আলফ্রেড আসতা বলেন, আমরা দুই ভাই ও এক বোন এবং এক সন্তানকে নিয়ে মধ্য ইথিওপিয়ায় ছোট্ট একটি বাসায় থাকি। বাসাটি ছোট হলেও বেশ গোছানো এবং জিনিসপত্রে ঠাসা। আমাদের না খেয়ে থাকতে হয় না। আমি নিয়মিত বেলকাটো বাজারে আসি। আমার বোনের পছন্দ ও আমার পছন্দের জিনিসগুলো ক্রয় করি। আমার ছোট বোন সবসময় বিস্কিট খায়। বিস্কিট ওর খুবই পছন্দ। আমিও বিস্কিট পছন্দ করি। কখনও কখনও আমার পছন্দ পাস্তা। এটা টমেটো সস বা কখনও কখনও ক্রিম দিয়ে খেতে পছন্দ করি। এ খাবারগুলো খুবই মজার। আসতার মতো মানুষরাই ইথিওপিয়ায় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ইথিওপিয়ায় এখন জনসংখ্যা ৮২ মিলিয়ন। দেশটির অর্থনীতিও বেশ দ্রুত বেড়ে চলেছে। আফ্রিকার প্রথম ও বিশ্বের পঞ্চম দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশ এখন ইথিওপিয়া। সে দেশে অর্থ আছে এমন প্রচুর মানুষ রয়েছেন, যারা নাজ ফুড প্রোডাক্টের মতো বিখ্যাত কোম্পানির তৈরি বিস্কিট কিনতে পারেন। এসব ফুড প্রোডাক্টের মালিকানায় রয়েছেন ইথিওপিয়ানরা। আর তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারী হিসেবে রয়েছেন পশ্চিমারা। লন্ডন থেকে ইথিওপিয়ায় কারখানা পরিদর্শনে যাওয়া ওই বিস্কিট কোম্পানির কর্মকর্তা অল্ডইউন্ড বলেন, বাজারে টিকে থাকার মূল বিষয় হলো বাজারের চাহিদা। আপনাকে দেখতে হবে মানুষ কী চায়। অর্থাত্ কী ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এখানকার বাজারে চাহিদা খুব দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। সে অনুসারে পণ্য উত্পাদনের ক্ষমতা তাদের কারখানার রয়েছে। তারা ইথিওপিয়ার বাজারটি বেশ ভালো বোঝেন।
আদ্দিসআবাবার বাজার বেশ সাধারণ ভোক্তানির্ভর। সাধারণ পণ্য যেমন দুধ, বিস্কিট, পানি এগুলোর চাহিদা এখানে ব্যাপক। এসব পণ্যের বিপণনের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। ইথিওপিয়ার অবকাঠামো অর্থাত্ রাস্তাঘাট, বিদ্যুত্ ও টেলিযোগাযোগ চীন বা ভারত বর্ষের চেয়ে বেশ দ্রুত উন্নত হচ্ছে। আর তাই ইথিওপিয়ায় নাজ ফুড প্রোডাক্টের বাজার গত ৩ বছরে ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নাজ ফুডের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন সেখানে নতুন নতুন ভবন, আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে, যা আদ্দিসআবাবার দৃশ্য পাল্টে দিচ্ছে। তারা বলছেন, দুর্ভিক্ষের বাইরে এখানকার বাজারে অর্থনীতির যে বিশাল সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে, তারা মূলত সেদিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন। পশ্চিমা কোনো বিনিয়োগকারী আদ্দিসআবাবার বাজারে এলে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর বিষণ্নতার পরিবর্তে তারা বেশ উত্ফুল্ল হয়ে ওঠেন। তবে এখানে যে অভাব নেই এমনটা নয়। অনেক মানুষ খুব কষ্টে আছেন। তারা শহরে এসে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। এখানে মূল্যস্ফীতি শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ কাজের খোঁজে শহরে আসেন। আর শহরের বাইরে থাকা ৮৫ ভাগ ইথিওপিয়ান কীভাবে প্রবৃদ্ধির অংশীদার হবেন সেটাই এখন বড় কথা।

No comments

Powered by Blogger.