শতবর্ষের ক্ষত

কে হারল, কে জিতল_ এ নিয়ে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ চরমে; কিন্তু হার-জিত নিয়ে না ভেবে নিউল্যান্ডসের উইকেট নিয়ে গবেষণায় মেতে উঠেছেন বিশেষজ্ঞরা। কী অপার রহস্য লুকিয়ে আছে এই উইকেটে? ৯৬ আর ৪৭ রানে বিশ্বের সেরা দুটি দলের একবার করে অল আউট হওয়ার পরও কেউই এ উইকেটের দোষ দিতে রাজি নন। যে উইকেটে ১৫১ রান আসতে পারে ক্লার্কের ব্যাট থেকে, যে উইকেটে বিভীষিকাময় ৯৬ আর ৪৭-এর পরও স্মিথ আর আমলা সেঞ্চুরি করতে পারেন, সে উইকেটকে ভূতুড়ে দিনটির জন্য কেউ দোষারোপ করছেন না।


তাহলে কি প্রাগৈতিহাসিক কিছু এসে অলৌকিকভাবে একদিনে ২৩ উইকেটের পতন ঘটিয়েছে? এসব খোঁড়া যুক্তিও কেউ মানতে নারাজ। আসল রহস্য যে উইকেটের মধ্যেই লুকিয়ে_ এটা বলেই এখন সে রহস্য উন্মোচনেই বিশেষজ্ঞরা মাঠে নেমেছেন। তবে একদিনে ২৩ উইকেট পতনের ঘটনা এ প্রথম নয়। এর আগে আরও তিনবার এর চেয়েও বেশি উইকেটের পতন দেখেছে টেস্ট ক্রিকেট। তাও প্রায় একশ' বছর আগের ঘটনা। শতবর্ষ পরে অবশ্যম্ভাবী এ ঘটনার সঙ্গে কিন্তু আগের তিন ঘটনার একটু বৈপরীত্য আছে। ওই তিন টেস্টের একটিতে মাত্র একটি সেঞ্চুরি ছিল; কিন্তু কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টে একদিনে ২৩ উইকেটের পতন সত্ত্বেও তিনটি সেঞ্চুরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, শতবর্ষের মধ্যে একদিনে সেরা বোলিং ছিল নিউল্যান্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিন। টেস্ট ক্রিকেটের শতবর্ষের নানা ঘটনা তুলে ধরা হলো সমকালের পাঠকদের জন্য
য় ১০০ বছরের মধ্যে একদিনে ২৩ উইকেটের পতনের ঘটনা এ প্রথম। এর আগে তিনবার ঘটেছিল এমন ঘটনা। তাও ১৯০৩ সালের আগে। সবগুলোই অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের রেকর্ডটি ১৮৮৮ সালের। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ওই টেস্টের দ্বিতীয় দিন পতন ঘটেছে ২৭ উইকেটের। ১৮৯৬ সালে ঘটেছে দ্বিতীয় ঘটনাটি। কিংসটন ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে পতন ঘটেছে ২৪ উইকেটের। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ১৯০২ সালে মেলবোর্নে। প্রথম দিনেই পতন ঘটে ২৫ উইকেটের।
য় শতবর্ষের মধ্যে এত বড় লজ্জায় অস্ট্রেলিয়াও আর কখনও পড়েনি। এক ইনিংসে এত কম রান গত একশ' বছরেও করেনি তারা। এর আগে ৩৬, ৪২ এবং ৪৪-এর তিনটি ইনিংস রয়েছে তাদের। সবগুলোই ১৯০৩ সালের আগে। দক্ষিণ আফ্রিকার ৯৬ রানের ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ২৪.৩ ওভার। ১৯৯২ সালে টেস্ট ক্রিকেটে আবার ফেরার পর ওভারের বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বনিম্ন স্থায়িত্বের ইনিংস এটা। রানের তুলনায় এটা দ্বিতীয়।
য় টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো এক দিনেই চার ইনিংসের দেখা পেয়েছে টেস্ট। দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়েছিল ৮ উইকেটে ২১৪ দিয়ে। শেষ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ৮১ রানে। এর আগে ২০০০ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ২০০২ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ড বনাম ভারতের টেস্টের দ্বিতীয় দিনে চার ইনিংসের দেখা পেয়েছে টেস্ট।
য় টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একদিনে একজন ব্যাটসম্যান দু'বার আউট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এ প্রথম। নিউল্যান্ডসে দু'জন ব্যাটসম্যান একই দিনে দু'বার আউট হয়েছেন। তারা হলেন অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্ক (১৫১ ও ২) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক রুডলফ (১৮ ও ১৪)।
য় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করেন নাথান লিওন। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৪ রান করেন তিনি। যা টেস্টের ইতিহাসে অষ্টম ঘটনা। এর মধ্যে তিনটিই ঘটেছে আবার কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের স্টিভ হার্মিসন সর্বোচ্চ ৪২ এবং ১৯০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বার্ট বোগলার অপরাজিত ৬২ রান করেন।
য় মাত্র ২১ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটে অস্ট্রেলিয়ার। সর্বশেষ উইকেট জুটিতে ২৬ রান যোগ করেন লিওন আর পিটার সিডল। যা ছিল আগের ৯ উইকেটের (২১) রানের চেয়েও বেশি। এর আগে ১৯৮০ সালে ওভালে ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্র টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড ৯২ রানে হারিয়েছিল ৯ উইকেট। যা পরে শেষ হয়েছিল ২০৯ রানে।
য় দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া দু'দলেরই দুই বোলার এক ইনিংসে ৮ ওভারেরও কম বোলিং করে সংগ্রহ করেছেন ৫টি করে উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন নেন ৫ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট। আর দক্ষিণ আফ্রিকার অভিষিক্ত ভারনন ফিলান্দার ৭ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। দু'ইনিংস মিলিয়ে তার উইকেট ৮টি।
য় গত চার বছরের মধ্যে এ প্রথম কোনো রান না করেই আউট হলেন জ্যাক ক্যালিস। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে কোনো রান না করে আউট হন তিনি। এরপর খেলেন ৫৬টি ইনিংস। যার মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোতেই রান করেন তিনি। একবার শুধু শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.