একই বলয়ে বন্দি হয়ে আছে ছাত্রদল by মোশতাক আহমদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের শক্ত অবস্থান ছিল ১৯৯০ সালে। ওই সময় ডাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন যথাক্রমে আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবীর খোকন ও নাজিমউদ্দিন আলম। তিনজনই এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে। ছাত্রদল মহলে গুঞ্জন আছে, নব্বইয়ের পর থেকে ছাত্রদলের সব কমিটি হয়েছে আমানউল্লাহ আমান বা তাঁর গ্রুপের পছন্দ অনুযায়ী। টুকু-আলিমের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিও তাঁদের পছন্দের বলে সবাই জানে।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাহাবুদ্দিন লাল্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ছাত্রদলের অনেক কিছুই জানি। তবে এখন মুখ খুলতে চাই না। কারো কারো পছন্দের লোক না হওয়ার কারণেই আমি এখন বিএনপি থেকে অনেক দূরে।' জানা গেছে, বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নব্বইয়ের দশক থেকে একটি শক্তিশালী
বলয়ের বাইরে যেতে পারছে না। যতবারই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে সব সময় দায়িত্ব পড়েছে ওই বলয়ের হাতেই। এ গ্রুপের বাইরে যাওয়ায় অনেক যোগ্য নেতাও দীর্ঘদিন ছাত্রদলের কমিটিতে ঢুকতে পারেননি।
বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। সব কিছু খালেদা জিয়ার নিয়ন্ত্রণে।' এর বাইরে কিছু জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
বারবার ভেস্তে যায় নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ : জানা গেছে, ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৩-১৪টি উপদল আছে। মাঝেমধ্যে নিজেরা নিজেরাই মারামারি করে। এক বছর ধরে মারামারি চলছে নতুন কমিটির জন্য। নতুন কমিটি করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু অজানা কারণে তা থেমে গেছে। এর জন্য ওই শক্তিশালী বলয়কেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
একটি সূত্র জানায়, ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন একজন রয়েছেন যিনি আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতেই ছিলেন না। অথচ ওই প্রভাবশালী গ্রুপের আস্থাভাজন হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে আছেন। কয়েক মাস আগে ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গ্রেপ্তার হওয়ার সময় ওই নেতাও গ্রেপ্তার হন। সূত্র মতে, ওই গ্রেপ্তারও নাকি ছিল ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার কৌশল।
জানা গেছে, ছাত্রদলকে গতিশীল করার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। আগামী জানুয়ারিতে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন কমিটি আসার কথা। এ লক্ষ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে একটি কমিটি করা হয়েছে শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে। তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। ২০০৯ সালের ১ জুলাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নেতৃত্বে বর্তমান কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই কমিটি এরই মধ্যে তাদের দুই বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছে।
বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি জানান, আগামী জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় ছাত্রদলের নতুন কমিটি হবে। এখন সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের নেতৃত্বে আরো একটি কমিটি হবে। কমিটিতে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতাও থাকবেন। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হবে।
ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ ও অকার্যকর। এরা জাতীয় ইস্যুতে আন্দোলন কিংবা ছাত্র আন্দোলনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাদের কর্মকাণ্ডে সাধারণ ছাত্রদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন নেই। উল্টো তারা পদ বিক্রি ও চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। ফলে আন্দোলনের স্বার্থে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে নতুনদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি করা দরকার।'

No comments

Powered by Blogger.