ছাত্র-সংঘাত-বেপরোয়া খুন, বেসামাল ছাত্ররাজনীতি by সুমন রহমান

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি নৃশংসভাবে ঘটতে থাকা ছাত্র হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্ররাজনীতির ভালো-মন্দের ইস্যুটি যখন আবারও ভাবনার কেন্দ্রে চলে এসেছে, তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলছেন, তাঁর সরকারের ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি অনুসারে ছাত্ররাজনীতি অব্যাহত থাকবে।


এই রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও উদারপন্থী বক্তব্যকে স্বাগত জানানো যেত; কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায়, এই বক্তব্য কি সময়োপযোগী? শুধু সাংবিধানিক বৈধতা আছে বলেই কি ছাত্ররাজনীতির নামে এই অব্যাহত খুনোখুনি ও সন্ত্রাসের সংস্কৃতি চলমান থাকবে?
সরকার শুধু নয়, আমাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ছাত্ররাজনীতি দেখার পক্ষে। তাঁদের চাওয়ার পেছনে ষাট দশকের আইয়ুববিরোধী বা আশির দশকের এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উজ্জ্বল স্মৃতির উসকানি আছে। তাঁরা মনে করেন, ছাত্ররা সব সময় জাতীয় রাজনীতির ভ্যানগার্ড হিসেবে কার্যকর থাকবে। যেকোনো স্বৈরতান্ত্রিক ও বিপথগামী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যখন জরুরি, তখন পেশাজীবী মধ্যবিত্ত যেখানে নিজস্ব সুবিধাবাদিতার কারণে মুখর হবে না, নিম্নবর্গের আওয়াজ যেখানে কেন্দ্রে অবস্থানকারী স্বৈরশাসকের সুরক্ষিত গদি পর্যন্ত পৌঁছাবে না, সেখানে ছাত্ররাই হয়ে উঠবে জাতীয় মুক্তির সর্বপ্রাথমিক বারুদঘর। আর এই রাজনীতির চর্চা ছাত্রকেও সমাজসচেতন, আদর্শচালিত ও সাহসী পেশাজীবীতে পরিণত করবে। দেশ এগিয়ে যাবে! কী সুন্দর অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ ইউটোপিয়া!
মেয়াদোত্তীর্ণ বলছি কেন? সত্য যে আইয়ুব কিংবা এরশাদবিরোধী রাজনীতিতে ছাত্রদের উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। কিন্তু এটাও সত্য যে স্বৈরাচার আমলের ছাত্ররাজনীতি আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ছাত্ররাজনীতি এক নয়। হতে পারে না। স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ছাত্ররাজনীতি বেড়ে ওঠে মূলত প্রতিরোধমূলক প্রণোদনা নিয়ে। সেই সময়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গণতন্ত্রকামী শক্তির দখলে থাকায় রাষ্ট্রীয় দমনকারী শক্তি এর বিপক্ষে কার্যকর থাকে। ফলে অপেক্ষাকৃত স্বাধীন একটা পরিবেশে গণতন্ত্রকামী শক্তির তারুণ্যের মধ্যে একটা সাংস্কৃতিক ঐক্য তৈরি হয়, যা বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের সূচনা করে। স্বৈরশাসকের ছাত্রভিত্তি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা এককাট্টাভাবে প্রতিরোধমঞ্চ হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। এটা সুস্থ পরিস্থিতি। এ রকমই হয়েছে ষাটের কিংবা আশির দশকের বাংলাদেশে। এ রকম পরিস্থিতিতেই কেবল ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’জাতীয় প্লাটফর্ম সম্ভব। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সেটা নিতান্ত অসম্ভব। গণতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের লেজুড় ছাত্রসংগঠন আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবস্থান করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এককাট্টাভাবে ‘বিরোধী’ মতাদর্শ ধারণ করতে পারে না। আবার বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন তার সামর্থ্যের পরীক্ষা করার জন্য বেছে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় নামক গিনিপিগটাকেই। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি তার অখণ্ড আদর্শিক চেহারা হারায়, দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে ক্ষমতাসীন, অন্যদিকে ক্ষমতাপ্রত্যাশী সংগঠন। পাঠক হয়তো ভাবছেন, ঠিকই তো আছে, এতে সমস্যা কী? এটা তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গোটা রাষ্ট্রেরই চেহারা। বটেই! কিন্তু প্রশ্ন হলো, গোটা রাষ্ট্রের এই চেহারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপেক্ষাকৃত ‘স্বাধীন’ পরিবেশে পুনরুৎপাদিত হওয়ায় আমরা বাড়তি কী পাচ্ছি? কী হারাচ্ছি?
সেটা বলার আগে বলে নেওয়া ভালো যে স্বৈরাচারী আমলগুলোতে ছাত্রদের তীব্র ভূমিকার স্মৃতিই কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে লোভী করে তুলেছে। ক্ষমতাসীন দল গোড়া থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে চায়। কারণ তার আশঙ্কা, এখান থেকেই হয়তো সরকার পতনের দাবানল ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার বিরোধী দলও সরকার পতনের হোমওয়ার্ক শুরু করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব সময় বিরোধী মতাদর্শের সহমর্মী। অথচ ভেবে দেখুন, বাংলাদেশে গত দুই দশকের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ছাত্ররাজনীতি জাতীয় রাজনীতিতে বলার মতো কী ভূমিকা রেখেছে? এই সময়ে কোনো সরকার পতনের আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়ে বেগবান হয়েছে এমনটা দেখা যায়নি। কানসাট বা শনির আখড়ার স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ বা প্রতিরোধের মতো কোনো ঘটনারও জন্ম দিতে পারেনি নব্বই-উত্তর ছাত্ররাজনীতি। জাতীয় রাজনীতির ঢেউ বরং বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগতে প্রতিবারই দেরি হয়েছে অনেক। কখনো লাগেইনি। এমনকি টেকনোক্র্যাট ফখরুদ্দীন সরকার যখন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ করে, যাঁরা কিনা দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষতম অভিভাবক, এর প্রতিবাদেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুখর হয়ে উঠেছে এমনটা দেখা যায়নি।
ফলে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে ছাত্ররাজনীতি তার ঐতিহ্যবাহী রি-অ্যাকটিভ মেকানিজম হারিয়ে ফেলেছে। আদর্শিক ছাত্ররাজনীতির চেহারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা আশির দশকে সর্বশেষ ভাঙাচোরাভাবে দেখেছি। তারপর তাও বিলীন হয়ে গেছে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির বাতাবরণে। বিশ্ববিদ্যালয় আর কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূতিকাগার হয়ে ওঠেনি এরপর, বরং সর্বব্যাপী রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের অনিবার্য ফল হিসেবে হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। সেটা হয়েছে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক মদদে এবং রাষ্ট্রীয় পরিবীক্ষণব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে ঢিলেঢালা থাকার সুযোগে। হলে আখড়া গাড়তে বহিরাগত সন্ত্রাসীর কোনো অনুমতি লাগে না, কিন্তু হলে তল্লাশি চালাতে পুলিশকে অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি আবার ন্যায়মূলক এবং অন্যপেক্ষ কোনোভাবেই নয়, তাতে নানা রকম চোরাগোপ্তা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকে। আবার পুলিশেরও নিজস্ব অরিয়েন্টেশন থাকে, থাকে আরও নিগূঢ় হিসাব। এসব হিসাববিজ্ঞানে যিনি পোক্ত, ছাত্ররাজনীতি তাঁর জন্য অত্যন্ত লাভজনক একটি পেশা। এসব ‘মেধাবী’ নেতা ছাত্রাবস্থাতেই কোটিপতি হয়ে যান এবং ছাত্রের পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার পরপরই সংসদ সদস্য হয়ে জাতির নীতিনির্ধারক বনে যান। তাই একদিকে যেমন চাচার বয়সী ছাত্রনেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়া কাটাতে কোনোভাবেই চান না, অন্যদিকে তাঁদের পোষ্যরা খুন-জখম, হুমকি-ধমকি এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমে নিজ নিজ কোটারির আধিপত্য বহাল রাখতে চেষ্টা করেন। এই ডামাডোলে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদ্যা যে কবে উধাও হয়ে গেছে, তা স্বয়ং বিধাতা জানেন! বিশ্ববিদ্যালয় এখন ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশীদের পেশির সামর্থ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এমন একটি মুক্তাঞ্চল, যেখানে বিদ্যমান রাজনীতির ভেতরের বিবাদ-বিসংবাদকে কেন্দ্র করে বড় রকমের শোডাউন হয়, রক্ত ঝরে, লাশ পড়ে এবং এর মাধ্যমে ওপর মহলে ক্ষমতাভাবনার মেরুকরণ হয়।
এসব প্রাগৈতিহাসিক ছাত্রনেতা ও হাল আমলের করপোরেট সন্ত্রাসীদের মিলনমেলাকে রাজনীতি বললেও এর মধ্যে ‘ছাত্র’ কোথায়? ছাত্র তো সেই বোবা মেজরিটি, যাকে প্রতিনিয়ত টিউশনি করে পড়ার এবং সংসারের খরচ জোগাড় করতে হয়, নেতা কিংবা সন্ত্রাসীর কাছে ধরনা দিয়ে হলে সিট পেতে হয়, এর প্রতিদানে নিয়মিত মিছিলে শামিল হতে হয়, মিটিংয়ে যেতে হয়, বড়ভাইদের ফুট-ফরমাশ খাটতে হয়, তারপর মাঝে মাঝে মাফিয়া চক্রের ক্ষমতা প্রদর্শনের দক্ষযজ্ঞে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। আমাদের ক্ষমতাবান গডফাদারদের কাছে এসব ছাত্র নেহাত সংখ্যামাত্র! তাস কিংবা দাবার ঘুঁটি। তাদের লাশের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা একটি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে হাতবদল হয়। কোনো ছাত্র লাশ হয়ে যাওয়ার পরই আমরা আবিষ্কার করি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে তার পেছনে পরিবারের বিনিয়োগ কী ছিল, কতটুকু প্রত্যাশা ছিল? রাজনীতির বিবেচনায় যে কিনা একটি সংখ্যামাত্র, পারিবারিক বিবেচনায় সেই ছিল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু, যাকে তিল তিল রক্তে-ঘামে বড় করে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছিল তার দুঃখী পরিবার। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কিনা নিছক সংখ্যা, সেই ছিল তার শিক্ষকের কাছে নতুন প্রতিশ্রুতি। এত কিছু প্রত্যাশা এবং প্রতিশ্রুতি থাকার পরও জয়ী হয় ছাত্ররাজনীতি, ছাত্র পরিণত হয় লাশে, দাবার ঘুঁটিতে। তার লাশ পড়ে থাকে ম্যানহোলে, শুরু হয় লাশের রাজনীতি। আমাদের বোবা মেজরিটি ছাত্র এভাবেই তার জীবন ও মরণ দিয়ে তথাকথিত ছাত্ররাজনীতির পরিষেবা করে চলে। আমরা যারা এসব ঘটনার ক্ষুব্ধ দর্শক, অবিরল তথ্যপ্রবাহ আমাদের এসব মৃত্যুর ঘটনাকে ভুলিয়ে দেয় হয়তো, কিন্তু নিহত ছাত্রের বাবা-মায়ের কান্না কি কোনো দিন থামে? নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের যে অমূল্য রক্তঝরা বিনিয়োগ নিয়ে ফারুক, মহিউদ্দিন কিংবা আবু বকরের মতো ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছিলেন; কোন রাষ্ট্রীয় অনুদান দিয়ে তাঁদের পরিবারের ক্ষতি পূরণ হবে?
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ব্যাপারে একধরনের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স অবস্থান নিয়েছে। অপরদিকে ছাত্রশিবিরের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে অকুণ্ঠ পক্ষপাত। দুটি বিষয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর বীতরাগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বারবার জানানো হয়েছে ছাত্রলীগকে। আমি একে নেহাত আইওয়াশ ভাবি না। গণতান্ত্রিক রাজনীতির পালাবদলে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা দিন দিন গৌণ হয়ে পড়ছে, প্রধানমন্ত্রীর বীতরাগের প্রকাশ থেকেও এটা ঠাহর করা যায়। আবার শিবিরের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর অপত্য অনুরাগ থাকার কারণ হলো, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের আস্থায় চিড় ধরেছে। ফলে ছাত্রশিবিরের ক্যাডারভিত্তিক রিক্রুটমেন্টই দলটির ভবিষ্যৎ।
তবে বীতরাগ প্রদর্শন, শাসানি কিংবা অভিমান করে এই ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতি রোধ করা যাবে না। দলীয় রাজনীতির লেজুড় যে ছাত্ররাজনীতি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সে তার ঐতিহাসিক ভূমিকাটুকু হারিয়ে ফেলেছে। ভোটের রাজনীতিতে তার কার্যকারিতাও কমে এসেছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে তাকে এখনো টিকিয়ে রাখার কোনো অর্থ হয় না, কারণ ছাত্ররাজনীতির বর্তমান সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কার্যক্রম অর্থাৎ জ্ঞানের উৎপাদন ও বিতরণকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতেই থাকবে। অতীত কালে আমরা এই ক্ষতিটুকু মেনে নিয়েছিলাম, যেহেতু উপনিবেশ ও স্বৈরশাসনবিরোধী সংগ্রামে ছাত্ররাজনীতির দরকারি ভূমিকা ছিল; যেহেতু ছাত্ররাজনীতির আদর্শিক ধারাটি জাতির সাংস্কৃতিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিত। সেসব আজ ইতিহাস। নতুন প্রেক্ষিতে নতুন করে ভাবা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলীয় রাজনীতির রিক্রুটমেন্ট সেন্টার হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় মতৈক্য হওয়া দরকার। রাষ্ট্রপতি চাইছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়ে উঠুক। সত্যি সত্যি বিদ্যায়তন হয়ে উঠুক। এটা সবারই চাওয়া। তবে এর জন্য প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শর্তহীনভাবে ছাত্র ও শিক্ষকের হাতে ফেরত দিতে হবে। আর তা করতে হবে বিদ্যমান রাজনীতির ধারা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুরোপুরি মুক্ত করার মাধ্যমে।
সেটা কীভাবে সম্ভব? ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে? উত্তর হলো, হ্যাঁ এবং না। বিশ্ববিদ্যালয় ভোটের রাজনীতির জায়গা নয়, দলীয় রাজনীতির রিক্রুটমেন্ট কেন্দ্র নয়, সন্ত্রাসের প্রজননক্ষেত্র নয়, পেশির সামর্থ্য প্রদর্শনের ডেমো এখানে আর নয়। তাতে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের রাজনীতি করার অধিকার তো ক্ষুণ্ন হয় না। সে তো জাতীয় রাজনীতিতেই সরাসরি জড়িত হতে পারে, ভোট দিতে পারে, চাইতে পারে, আরও বয়স্ক হয়ে নির্বাচন করতে পারে। ছাত্র তাই স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবেই রাজনীতি করুক, ছাত্র হিসেবে নয়।
অতীতে যতবারই ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কথা উঠেছে; শুনেছি, অনেকে বলেন ছাত্ররাজনীতির ‘গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের’ কথা। কিন্তু যে ঐতিহ্য বর্তমানের চাহিদার সঙ্গে খাপ খায় না, তাকে ধরে রাখার নামই পশ্চাত্পদতা। অনেকে আবার বলেন, মাথাব্যথার জন্য তো মাথা কেটে ফেলা যায় না। মোক্ষম কথা। তবে পিত্তে পাথর হলে পিত্ত কেটে ফেলাই চিকিৎসা। বিদ্যমান ছাত্ররাজনীতি এখন আর মাথার সমস্যা নয়, পিত্তের সমস্যা।
সুমন রহমান। কবি, কথাসাহিত্যিক।

No comments

Powered by Blogger.